জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 495 বার
আদালত অবমাননার দায়ে ফেনীর সাবেক জেলা জজ মো. ফিরোজ আলমকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছেন হাইকোর্ট। জরিমানার এই অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ না করলে তাকে সাত দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেন। এ মামলার অপর দু’জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২০০৩ সালে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি ফেনী সফরে গিয়ে প্রটোকল না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আদালত ফিরোজ আলমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি রুল জারি করেন। জারি করা সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ রায় দেন। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভ্রমণ ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক দফা নির্দেশনাও দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে ফিরোজ আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফয়সাল এইচ খান ও আইনজীবী মইন উদ্দিন টিপু। এ মামলার অপর দুই বিবাদী ফেনী জেলা জজ আদালতের দুই কর্মচারী ইয়ার আহমেদ ও আলতাফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২২ অক্টোবর হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ফেনী সফরে যান। তার সফরসূচি জানিয়ে ফেনী জজ আদালতে আগেই চিঠি পাঠানো হয়।
ওইদিন দুপুরে ট্রেনে ফেনী পৌঁছে জেলা জজ আদালতের কোনো প্রতিনিধিকে না পেয়ে জেলা জজকে ফোন করেন বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। আদালতের একজন কর্মচারী ফোন ধরে তাকে বলেন, জজ এজলাসে আছেন। এজলাস থেকে নামলে বিষয়টি তাকে জানানো হবে।
কিছুক্ষণ পর আবারও জেলা জজকে ফোন করেন হাইকোর্টের বিচারপতি। তখনও আদালতের ওই কর্মচারী একই কথা বলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪টায় বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম তার ছেলেকে জেলা আদালতে পাঠান। কিন্তু সেখানে জেলা জজ বা কোনো কর্মকর্তা তার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। পরে জেলা প্রশাসক ওই বিচারপতির প্রটোকলের ব্যবস্থা করেন।
প্রটোকল নিয়ে নির্দেশনা: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সফরে প্রটোকল দেওয়ার বিষয়ে জেলা জজশিপ ও জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের চার দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
নির্দেশনার প্রথম দফায় বলা হয়েছে- ছুটির দিনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কোনো জেলা সদরে পরিদর্শন, ভ্রমণ বা সফরে গেলে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার অন্তত একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতিকে সার্কিট হাউস বা তার অবস্থানের জায়গায় অভ্যর্থনা জানাবেন। জেলা ও দায়রা জজ সে সময় জেলা সদর দপ্তরে অবস্থান করলে অবশ্যই তাকে সফরকারী বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হবে।
দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে- সপ্তাহের কোনো কর্মদিবসে অফিস চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি সফরে গেলে জাজ ইনচার্জ নেজারত তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। তবে আদালতের কার্যক্রম শেষে জেলা দায়রা জজ অথবা তার অনুপস্থিতিতে একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে- সফরকারী বিচারপতি উপজেলা বা গ্রামে অবস্থান করলে জাজ ইনচার্জ নেজারত অথবা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তার দেখভাল করবেন।
নির্দেশনার চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে- সফরকারী বিচারপতির বিদায়ের সময় জেলা ও দায়রা জজ বা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা তাদের প্রতিনিধিদেরও সে সময় উপস্থিত থাকতে হবে।
Leave a Reply