ভেনিজুয়েলায় বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকৃতি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন কূটনীতিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও বলিভিয়াসহ কয়েকটি দেশ। অন্যদিকে গুয়াইদোকে সমর্থন জানিয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও কানাডাসহ অনেকগুলো দেশ। গত দুই দিনে দেশটিতে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে। খবর সিএনএন, বিবিসি ও আল-জাজিরা’র

বিক্ষোভে উত্তাল কারাকাস :প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে রাজধানী কারাকাসসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে তেল সমৃদ্ধ ভেনিজুয়েলায়। পুলিশের সঙ্গেও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তবে মাদুরোর সমর্থণেও বড় বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন শহরে। দেশটির বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলছে, গত দু’দিনের বিক্ষোভের সময় ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। বিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান গুয়াইদোর সমর্থনে বুধবার রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। এসময় তিনি ডান হাত উপরের দিকে তুলে শপথ নেওয়ার মতো করে নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। সরকারের নির্দেশ অমান্য করার জন্যে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিও আহবান জানান। ভেনিজুয়েলা স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত গুয়াইদো আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দেশের সংবিধানের ২৩৩ ও ৩৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। গত নির্বাচন বৈধ না হওয়ায় মাদুরোকে অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন গুয়াইদো। হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসেন মাদুরো। কিন্তু গত বছরের নির্বাচনে তিনি জয় পান যা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। চলতি মাসে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। এরপরই বিরোধীরা তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন মাদুরোর

বিরোধী নেতাকে সমর্থন দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো। তিনি মার্কিন কূটনীতিকদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ক্যু করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের স্বীকৃতির ঘোষণা দেশটিতে অস্থিরতার পথ উন্মোচন করেছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ভাষণ দেওয়ার কথা মাদুরোর। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বৈধ ক্ষমতা মাদুরোর নেই। যুক্তরাষ্ট্র কাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোকে ব্রিফ করতে পারে। এরই মধ্যে কারাকাসে মার্কিন দূতাবাস নিজ দেশের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের সমর্থন গুয়াইদোকে

দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৩৫ বছর বয়সী গুয়াইদোকে সমর্থণ দেন। এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, মাদুরো অবৈধ প্রেসিডেন্ট। ভেনিজুয়েলার জনগন সাহসের সঙ্গে মাদুরো এবং তার শাসনামলের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন চায়। যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপ করতে পারে বলে মাদুরোকে সতর্ক করেন ট্রাম্প। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখনই সামরিক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছেন না। তবে টেবিলে সব বিকল্প আছে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে সাড়া দিয়ে ১৪ জাতির লিমা গ্রুপের ১১টি দেশ (ব্রাজিল, কানাডা, কলম্বিয়া, চিলি, পেরু, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, কোস্টারিকা, গুয়েতেমালা, হডুরাস ও পানামা গুয়াইদোকে সমর্থণ দিয়েছে। এছাড়া মেক্সিকো, ইকুয়েডর ও অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) গুয়াইদোর পাশে দাঁড়িয়েছে। সরাসরি কারো পক্ষ না নিয়ে গণতন্ত্রের পাশে সবাই থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

মাদুরোর পাশে প্রভাবশালী দেশ

সমাজতান্ত্রিক দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, মেক্সিকো, বলিভিয়া ও কিউবা। রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ ভেনিজুয়েলার কোন ধরণের সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন পদক্ষেপ নিলে সেটা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তিনি একইসঙ্গে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতি মস্কোর সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছে চীন ও তুরস্ক।