শুধু ফরমায়েশ বা নির্দেশনা তামিলই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আনুগত্য আছে এবং দুর্নীতি করবেন না, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না, নিজের সততা-নিষ্ঠা-যোগ্যতায় বলীয়ান হয়ে আত্মশাসনবোধের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে যাঁরা গঠনমূলক ইতিবাচক মন্ত্রণা দিতে পারবেন—তাঁদেরই আমরা মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।

খুব সহজ করে যেটা বলা যায় সেটা হচ্ছে, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলনটা করে এসেছিলাম; যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখতে চেয়েছিলাম মন্ত্রীদের, যাঁরা রাজনীতি করবেন, যাঁরা মন্ত্রী হন, সংসদ সদস্য হন, তাঁদের সব সময় সৎ আর যোগ্য মানুষ চেয়েছি।

আমার ব্যক্তিগত কথাটা হলো, সৎ বলতে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সৎ; মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার মধ্যে যে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আছে সেটা হলো নাগরিকদের আত্মশাসন। আত্মশাসনের সঙ্গে কিন্তু স্বাধীনতার সম্পর্ক আছে। স্বাধীনতা বলতে একজন মানুষ, একজন নাগরিক হিসেবে আমি যাতে আমার জীবনটা আমার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি; আমার জীবনযাপনের জন্য কারো কাছে নত হতে না হয়, কারো কাছে ছোট হতে না হয়, কারো কাছে অমর্যাদার শিকার হতে না হয়। এটাই আমার স্বাধীনতার বোধ বলেই আমি মনে করি।

সেই জায়গা থেকে বলছি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যাঁদের আনুগত্য আছে, স্বাধীনতার বোধকে যাঁরা মর্যাদা দিতে জানেন, যাঁরা মনে করেন যে জনগণ এই দেশের মালিক—সে রকম মানুষকেই মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। সেটাই তাঁদের সততার জন্য পরীক্ষা।

আর যোগ্যতা হলো সেই সততার বোধটাকে যাঁরা যোগ্যতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারেন, অর্থাৎ পরিকল্পনা, নীতিগ্রহণ; সেই নীতি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে, কিভাবে বিধিবিধান প্রণয়ন হবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হবে—সেই সমস্ত ব্যাপারে যাঁদের যোগ্যতা আছে তাঁদেরই মন্ত্রী হিসেবে পেতে চাই। এমন বিষয়টি দেখতে চাই না যে—শুধু একটি বিশেষ স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে কেউ মন্ত্রী হয়ে যাবেন।

যেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবার একটি বড় অঙ্গীকার করে বিজয়ী হয়ে এসেছে যেটা হলো, দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাবে। কিন্তু অতীতে তাদের বিষয়ে এ ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তারা যে ভূমিকা বা যে কার্যকারিতা দেখিয়েছে সেটা সন্তোষজনক নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি বলতে শুধু আর্থিক দুর্নীতিকেই বোঝায় না, মানুষের ক্ষমতার অপব্যবহার, কোনো একটি বিশেষ অবস্থার সুযোগ নিয়ে অন্যের ওপর অত্যাচার করা, অন্যের জমি কেড়ে নেওয়া, অন্যের অধিকারের লঙ্ঘন ঘটানো এবং সেটার জন্য কোনো রকম দায়বদ্ধতার পরিচয় না দেওয়াটাও দুর্নীতি। সেখানে কেউ যেন দায়বদ্ধতা এড়াতে না পারে, সেই সুশাসনের বিষয়টিও থাকবে। আমরা দেখতে চাই রাষ্ট্র এসবের মধ্য দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে; এসব ব্যাপারে যাঁদের অঙ্গীকার আছে, সত্যিকার অর্থে আনুগত্য আছে, অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শক্তি, যোগ্যতা ও সাহস আছে, তাঁরা মন্ত্রী হবেন বলেই আমাদের কাম্য। কারণ এ ক্ষেত্রে সাহসেরও প্রশ্ন আছে।

লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা