চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ) মোটামুটি নিশ্চিত ধরে নিয়ে কাজ শুরু করেছে ব্রিটিশ সরকার। গত মঙ্গলবার সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ব্রেক্সিটের জন্য ২০০ কোটি পাউন্ড (২৫০ কোটি ডলার) অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে সাড়ে তিন হাজার সেনা প্রস্তুত রাখা হবে বলেও এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়।

ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার আর মাত্র ১৪ সপ্তাহ বাকি। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে যে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন তা পার্লামেন্টের সমর্থন না পাওয়ায় কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই ব্রেক্সিটের দিকে এগোচ্ছে ব্রিটেন। তবে ওই খসড়া চুক্তিটি এখনই পুরোপুরি বাতিল করে দিতে চাইছেন না মে। বরং এটি নিয়ে আগামী মাসের মাঝামাঝি আবারও ভোটাভুটির ইচ্ছা আছে তাঁর। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তিটি গ্রহণ করার বিষয়ে এমপিদের এক ধরনের চাপে রাখতেই আবারও ভোটের ব্যবস্থা রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।

বড়দিন ও নতুন বছরের ছুটি শুরু হওয়ার আগে গত মঙ্গলবার শেষবারের মতো বৈঠক করে মন্ত্রিসভা। এই বৈঠকেই চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটকে ‘কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার’ হিসেবে বিবেচনা করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সাড়ে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাভিন উইলিয়ামসন। তবে ব্রেক্সিটমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে বলেন, মন্ত্রীরা এখনো মের খসড়া চুক্তির বিষয়ে হাউস অব কমন্সের অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, যেকোনো দায়িত্বশীল সরকারই আগামী ২৯ মার্চ ইইউ ছাড়ার ব্যাপারে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চুক্তি ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের মধ্যে প্রাধান্যের ভিত্তিতে কাজ করার এটি একটি বাস্তবভিত্তিক উপায় হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে এখনো আমরা একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী।’ তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে কী করে সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতিটি নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে অবহিত করবে। অনেকেরই আশঙ্কা, বিষয়টি ব্রিটেনের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর হতে পারে। জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে শতাধিক পৃষ্ঠার পরামর্শপত্র দেওয়া হবে। অন্তত ৮০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে এই চিঠি ই-মেইল করা হবে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন চাকরি, ব্যবসা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইইউ থেকে বের হওয়ার এটিই সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হতে পারে।’ এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রেক্সিট তহবিলের সবচেয়ে বড় অংশটি পাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে এর একটা বড় অংশ খরচ হবে। আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ ছাড়তে হবে ব্রিটেনকে। তবে ১৮ মাস ধরে টানা আলোচনা চলার পরও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মের খসড়া চুক্তিটি এমপিদের পছন্দ হয়নি। মূলত সে কারণেই চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের কথা বলা হচ্ছে। আরেকটি পথও অবশ্য রয়েছে। আবারও গণভোট আয়োজন। বহু এমপি এখন এর পক্ষে কথা বলছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মে ব্রেক্সিট নিয়ে আবারও গণভোট আয়োজনের পক্ষে নন। সূত্র : এএফপি।