পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫)। ফোনে নকল থাকার অভিযোগ তুলে তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে তারা স্কুলে যান এবং মেয়ের হয়ে দফায় দফায় ক্ষমা চান। এরপরও প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করেন এবং স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এতটা অপমান সহ্য করতে পারেনি অরিত্রি। বাসায় ফিরে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায়।

অরিত্রির বাবা সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী দিলীপ অধিকারীর ভাষ্য, রোববার পরীক্ষার হলে অরিত্রি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ায় তাকে ও তার স্ত্রীকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা সোমবার গিয়ে মেয়ের হয়ে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু তিনি ‘কিছু করার নেই’ জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের কাছে যেতে বলেন। এরপর তারা প্রিন্সিপালের কাছে গিয়েও ক্ষমা চান। একপর্যায়ে অরিত্রি তার পা ধরে ক্ষমা চায়। তাতেও কাজ হয়নি। প্রিন্সিপাল তাদের অপমানজনক কথাবার্তা বলে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন।

দিলীপ অধিকারী বলেন, ওই ঘটনার পর অরিত্রি প্রিন্সিপালের রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। তারাও তার পিছু নেন। স্কুল থেকে বের হয়ে মেয়ে একাই একটি রিকশায় তাদের শান্তিনগরের বাসায় চলে আসে। পরে তারা ফিরে দেখেন, নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছে অরিত্রির নিথর দেহ। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনরা জানান, দুই বোনের মধ্যে বড় ছিল অরিত্রি। তার ছোট বোন হৃদি অধিকারী একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।

এদিকে অরিত্রির মৃত্যুর খবর শুনে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে যান ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস। সেখানে তিনি অরিত্রির স্বজনদের তোপের মুখে পড়েন। তারা প্রিন্সিপালের গাড়ি ঘিরে রাখেন। নাজনীন ফেরদৌস দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যান।

ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস জানান , তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র বা ক্লাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। এরপরও অরিত্রি অধিকারী পুরো বইয়ের পৃষ্ঠা মোবাইল ফোনে কপি করে সেটি টেবিলের ওপর রেখে পরীক্ষায় নকল করছিল। তাকে হাতেনাতে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তার বাবা-মাকেও খবর দেওয়া হয়। তাদের পুরো ঘটনা জানানো হয়। এরপরও অরিত্রির বাবা-মা মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। যেটা সম্ভব হয়নি। এরপর তারা কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর বাসায় কী হয়েছে তিনি তা বলতে পারবেন না।

ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস আরও বলেন, একজন ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। অরিত্রির স্বজনরা তখন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

পল্টন থানার এসআই আতাউর রহমান জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলেই অরিত্রির মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। পুরো প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।