দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে…। তার ভাষায় বলতে চাই, আমি আবার আসিব ফিরে এই সংসদে।

সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। অধিবেশনে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদও সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

সংসদ নেতা বলেন, যদি কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ না হয়, এটাই হচ্ছে সংসদের শেষ অধিবেশন। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে। তা হচ্ছে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, উন্নত জীবন দেওয়া।

শত বাঁধার মুখেও ২০১৪ সালে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য জনগনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা মানুষের দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন হয়েছে। বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি করেছি। নিজস্ব অর্থায়নেই আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। উন্নয়ন প্রকল্পও ৯০ ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি, কারও কাছে হাত পাততে হয় না। সেই আত্মমর্যাদা আমাদের গড়ে উঠেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি। এগুলোও এখন দৃশ্যমান।

বঙ্গবন্ধুর উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, তা রক্ষা করা আরও কষ্টকর। পাওয়া যত কষ্টকর, তা ধরে রাখা আরও কষ্টকর। দেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে, কঠোর পরিশ্রম ও সৎ পথে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। সেই পরিশ্রমের ফসল দেশের জনগণ এখন ভোগ করছে।

বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সেজন্য ব্যাংক, বীমা, বেসরকারি টেলিভিশনসহ সবকিছু বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যত কী হবে, জীবনমান কেমন হবে? কেমন বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই, সেটাই একমাত্র চিন্তা। টানা ১০ বছরে আমাদের শাসনমালে তরুণ প্রজন্মের সুন্দর জীবন দিতে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি।

অধিবেশনের শেষ দিনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, অংশগ্রহণের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে দশম জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সংসদ। সরকারে থাকার কারণে হয়তো অনেকে আমাদের সমালোচনা করেন। কিন্তু এটা একটা পরীক্ষামূলক যাত্রা ছিল।

তিনি বলেন, সংসদ অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতার ৭০ শতাংশ উপস্থিতি কেউ কল্পনাই করতে পারত না। কারণ আগের সংসদগুলোতে বিরোধীদলীয় নেতা তো দূরের কথা, বিরোধীদলই উপস্থিত থাকত না।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া জাতীয় সংসদে বলেন, আমার দৃষ্টিতে দশম সংসদ একটি ফলপ্রসূ সংসদ। আমি ১৯৮৬ সালের পর থেকে সংসদে আছি, ওই সময়ের পর এবারের সংসদই সবচেয়ে প্রাণবন্ত কার্যক্রম চলেছে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে সংসদে বিরোধীদলকে প্রায় কথা বলতেই দেয়া হয়নি। প্রায় ২০০ আইন প্রণয়নসহ সার্বিক কার্যক্রম বিবেচনায় দশম সংসদ অত্যন্ত সফল।

গণপরিষদ থেকে শুরু করে বেশির ভাগ সংসদেই উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি অধিবেশনে দশম সংসদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে দশম সংসদ সফল সংসদ হিসেবে কাজ চালিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস হচ্ছে সরকার ও বিরোধীদলের অংশগ্রহণে আন্তরিক পরিবেশে জনগণের কল্যাণে কাজ করা। এ সংসদে সেটাই হয়েছে।