ভোটাধিকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সব দলের আইনজীবীকে নিয়ে একটি বৃহত্তর মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।

সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ ঘোষণা দেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি অতীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন করে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির একসভা গত ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো:

১. দেশে গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যজোট গঠিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং স্বাগত জানাচ্ছে।

২. বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি অতীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন করে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মহাসমাবেশের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৩. সব মানবাধিকার সংগঠন এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে একটি বৃহত্তর সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৪. সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সঙ্গে সাধারণ আইনজীবী যারা এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ/সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৫. এই বিষয়ে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, সিনিয়র সহসভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা, সহসভাপতি ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া এবং সিনিয়র সহসম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন, সব পর্যায়ের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করার দায়িত্বপালন করবেন এবং সার্বিক সহযোগিতায় থাকবেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।

৬. সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমিতির দীর্ঘদিনের দাবি নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করা এবং দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানুষের ভোটের অধিকার এবং আগামী দিনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হবে।

সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহসম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন, সদস্য মাহফুজ বিন ইউসুফ, ব্যারিস্টার শফিউল আলম মাহবুব, আহসান উল্লাহ, মেহেদী হাসানসহ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের হাতাহাতির ঘটনায় চার সদস্যের কমিটি

সুপ্রিমকোর্টে বার ভবনে আইনজীবীদের বসার জন্য নির্দিষ্ট হলরুমের চেয়ার-টেবিল সরিয়ে সম্মেলন করাকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনায় চার সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. গোলাম মোস্তফাকে আহ্বায়ক করে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আরেক সহসভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. আহসান উল্লাহ ও শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া। সোমবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে এই সাব-কমিটি গঠন করা হয়।

সাব-কমিটি গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বসা (গত ৯ অক্টোবর) নিয়ে সমিতির সাধারণ সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলার জন্য আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দায়ী কি না, তিনি অপরাধ করেছেন কি না, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন কি না, নাকি অন্যের প্ররোচনায় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বা অন্যের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো তদন্ত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমিতি বরাবরে পেশ করার জন্য ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত সাব-কমিটি গঠন করা হলো।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে নিয়োগ পান তিন বিচারপতি। সেই নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। বার সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সম্মেলনটি শুরু হয়। সংবাদ সন্মেলন নিয়ে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনসহ অন্য আইনজীবীরা কথা কাটাকাটিসহ ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন।