এই মুহূর্তে ফেসবুকে ভাইরাল যে শব্দ দুটি, তা হলো- H2O এবং Wish। বিশেষ করে H2O তে ভেসে গেছে নিউজফিড।

সামাজিক মাধ্যমে গতকাল থেকেই রসায়নের রসবোধ উপচে পড়ছে। পানির রাসায়নিক সংকেত নিয়ে ফেসবুক রসিকতায় টইটুম্বুর।

একজন লিখেছেন, জীবন মানে জি-বাংলা হতে পারলে রেস্টুরেন্ট এর নাম H2O হতে পারবে না কেন?

কেউ লিখেছেন, দোকানদারকে H2O হিট করে একটা চা দিতে বললাম, সে পাত্তাই দিল না। এই দোকানদারের জন্য তোমরা এখন কী Wish করবা বন্ধুরা?

ব্যাপারটি নিয়ে ট্রল কম হচ্ছে না। বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে এসব শেয়ার হচ্ছে।

এর পেছনের কাহিনী জানেন না যেসব পাঠক তাদের মনে প্রশ্ন জাগবেই, দেশটা রসায়ন শাস্ত্রকে নিয়ে পড়েছে কেন?

তাহলে আসা যাক ঘটনার পটভূমিতে। এ ঘটনার মঞ্চ রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির রাজদর্শন হল। যেখানে রোববার এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফাইনাল আয়োজিত হয়েছে। ৩০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এবারের প্রতিযোগিতায় সেরা সুন্দরীর মুকুট পড়লেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।

প্রসঙ্গত, এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রতিযোগী কতটা জ্ঞানী, কতটা উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন সেদিকেও বিশেষ নজর দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে বিচারকদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সুন্দরীদের।

২০১৭ এর লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিচারক প্রশ্ন করেছিলেন- কোন রাতে পৃথিবীতে উল্কা পড়ে না? উত্তর প্রতিযোগী বলেছিলেন আমি কমার্সের ছাত্রী!

সে রকমই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। গতকাল ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় এক প্রতিযোগীকে প্রশ্ন করা হলো: H2O মানে কী?

উত্তরে প্রতিযোগী অনেকটা সময় কাচুমাচু করে বললেন: ধানমন্ডিতে একটা রেস্টুরেন্ট আছে এই নামে…।

অন্য আরেক প্রতিযোগীকে জিজ্ঞেস করা হলো: তুমি সুন্দরী হলে বাংলাদেশের জন্য কী উইশ করবে? তিনি ইংরেজী শব্দ ‘উইশ’ এর অর্থ বুঝলেন না।

তিনি বললেন, ‘অ্যাট ফার্স্ট অবশ্যই আমার কান্ট্রির জন্য উইশ করব। বাংলাদেশের একটা লংগেস্ট সি বিচ আছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুন্দরবন। অনেক বিউটিফুল। নেক্সট আমাদের দেশে অনেক সুন্দর সুন্দর পাহাড়-পর্বত রয়েছে। আমি এগুলোকেই উইশ করব।’

অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীদের এমন বোকার মতো উত্তরে ক্ষোভ ঝেড়ে অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন – আমরা কি এই সুন্দরী চেয়েছিলাম?!

বিজ্ঞের মতো অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন, আমাদের দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র সৌন্দর্য খুঁজে। সে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা , জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় নয়। কাঁঠাল থেকে আমসত্ত্ব আশা করেন কীভাবে? এ আপনাদের কেমন বিবেচনা?

যাই হোক ফেসবুক যেন আজ H2Oতে ছয়লাব।

ফেসবুকে এখন শব্দ দুটি তুমুল ভাইরাল। কেউ কেউ এ প্রশ্ন উত্তর পর্বটির ভিডিও শেয়ার করেছেন।

তবে বিজ্ঞ বিচারকদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তাদের মতে এমনসব প্রশ্নে রীতিমতো প্রতিযোগীরা বিব্রত। বিচারকদের সমালোচনা করে কেউ কেউ লিখেন, প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল -H20 কিসের সংকেত? H20 মানে কী নয়। তবে যতই ট্রল আর সমালোচনা হোক, দিন শেষে সচেতন নাগরিকদের মনে যে কথার উদয় হয় তা হলো – সুন্দরী বলতে কী আমরা শুধু গায়ের রং, গঠন ও আকর্ষণীয় মুখমণ্ডল বুঝি?

কারণ মিস ইউনিভার্স কিংবা মিস ওয়ার্ল্ড আসরের প্রতিযোগীদের কঠিন প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেখে বিশ্ব পুলকিত হয়।

মেধার কাছে হেরে যায় তাদের দৈহিক সৌন্দর্য। আর আমাদের H2O-মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগীদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের এহেন হাল! আমাদের এই মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের অবস্থান তাহলে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? এর উত্তর একটাই।

৩০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের রাজদর্শন হলে প্রতিযোগীরা সে উত্তর দিয়ে ফেলেছেন।