নোয়াখালী সদর উপজেলার বেদেপ্ললীর এক কিশোরের মৃত্যুর গুজবে কান দিয়ে উপজেলার পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে তাণ্ডব চালানো হয়। সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) এই ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বৃষ্টির মধ্যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে। অনেকে ভয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সুধারাম থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

বেদেরা অভিযোগ করেন, তাদের ৩২টি টিনের ঘর, ১০টি তাঁবু ও ২৫টি খুপরি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এছাড়া ১১টি ঘর ও ১১০টি সাপ পুড়ে যায়। হামলায় আহত হন ছয় বেদে।

সুধারাম মডেল থানার ওসি মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেদেপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বেদে সর্দার জাকের হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে স্থানীয়দের মধ্যে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দুইশ জনকে আসামি করা হয়। অপর মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন কিশোর তারেক আজিজের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাহার। এই মামলার এজাহারে বেদেদের ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫/১৬ জনকে আসামি করা হয়।’

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে হামলার ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি। তারা হলো- এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে মাওলানা নুরুজ্জামান, কামরুজ্জামান, সফি উল্যার ছেলে ফয়েজ আহমেদ ও নূর ইসলামের ছেলে মাইন উদ্দিন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেদেপল্লীর এক কিশোরী দোকোনে আইসক্রিম কিনতে গেলে দোকানি তাকে অশালীন মন্তব্য করে। এনিয়ে বেদেদের সঙ্গে দোকানি ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় চা দোকানের গরম তেলে তারেক আজিজ (১৭) নামের এক কিশোরের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) তারেকের মৃত্যুর গুজবে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বেদেপল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

বেদে সর্দার মো. ওয়াসিম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে বেদে পরিবারগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেক পরিবার মালামাল নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।’ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দাবি জানান তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য কোনও বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’

ঘটনার পর পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও বেদেদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন পক্ষ কাজ করছে।’

ঘটনার পর নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরকে শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও গৃহনির্মাণে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।’