গত ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহার জামাতকে ঘিরে শোলাকিয়া ময়দানে গড়ে তোলা হচ্ছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নজরদারির জন্য দুটি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ার আকাশে। বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আরআরএফসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

জামাত সামনে রেখে শহর ও আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। ঈদগাহ ময়দান, অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশের এলাকা নিয়ে আসা হচ্ছে কোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায়। মাঠে স্থাপন করা হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হবে ঈদগাহ ময়দানে। এর আগে আরও অন্তত কয়েক দফা মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে তারা আসতে পারবেন।ফলে নিরাপত্তা নিয়ে কোন ঝুঁকি দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

শোলাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই ঈদগাহে সকাল ৯টায় ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ১৯১তম ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা হিফজুর রহমান খান। শোলাকিয়া ঈদগাহের নিয়মিত ইমাম ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এবার হজে যাওয়া বিকল্প ইমাম হিসেবে মাওলানা হিফজুর রহমান খান জামাতে ইমামতি করবেন। পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে শোলাকিয়া ময়দান ও আশপাশের এলাকা। মাঠের ভেতরে-বাইরে সাদা পোশাকেও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে শোলাকিয়া ময়দান ও আশপাশের এলাকা। মাঠের ভিতর-বাহিরে সাদা পোশাকেও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান। সার্বিক প্রস্তুতির বিবেচনায় নির্বিঘ্নে শোলাকিয়ায় মুসল্লিগণ ঈদুল আজহার জামাত আদায় করতে পারবেন বলে পুলিশ সুপার আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবুশামা মো. ইকবাল হায়াতসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এবারও সে সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তায় র‌্যাব, পুলিশসহ বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সুষ্ঠুভাবে ঈদজামাত আদায়ের লক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ ফোর্সকে আইনগত দিকনির্দেশনা দেয়াসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য ঈদগাহ মাঠের বিভিন্ন পয়েন্ট ও এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গৃহীত প্রস্তুতির বিবেচনায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অংশগ্রহণে এবারো উৎসবমুখর পরিবেশে সুন্দর ও সুচারুভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদের দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। আগামীকাল বুধবার ঈদুল আজহার দিন ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামের দুটি বিশেষ ট্রেনের একটি সকাল ৬টায় ভৈরব বাজার থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে। জামাত শেষে ট্রেনটি দুপুর ১২টায় পুনরায় ভৈরববাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। অপর ট্রেনটি ঈদের দিন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে। এ ট্রেনটিও জামাত শেষে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

১৮২৮ সালে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ওই বছর স্থানীয় সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ সৈয়দ আহমদ (র.) এর ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সে ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমানে ‘শোলাকিয়া’ নামকরণ হয়েছে।