এক আমেরিকার ভিসা নীতিতে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আজকের একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম পড়ে শোনান।

আমেরিকার ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে উৎকণ্ঠা ও সচিবালয়ে আলোচনা-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এক আমেরিকার ভিসা নীতিতে তাদের (সরকার) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা এত চুরি করেছে, এত লুটপাট করেছে যে শুধু আওয়ামী লীগের লোকেরাই নয়; প্রশাসনের কিছু কিছু লোক এই সরকারকে সহায়তা দিতে গিয়ে সব খেতে খেতে এখন বালু খাওয়া শুরু করেছে। চাঁদপুরে ৬ হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। এটা আমার কথা নয়, নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের কথা।’
এই লুটপাটের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

গত এক বছরে বিএনপির ২২ নেতা-কর্মীকে হত্যা, গত ১৫ বছরে ৭০০ জনকে গুম ও ৪৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের এবং নেতাদের দ্রুত সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গুম করে, খুন করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই একমাত্র উদ্দশ্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে বলছে, বাইরে বলছে, জাতিসংঘে বলছে যে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অত্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। এ কথা কি কেউ বিশ্বাস করে? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এ কথা কেউ বিশ্বাস করে না। কারণ, আমরা অতীতে দেখেছি।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কোনো টালবাহানা করবেন না। এই দেশের মানুষ এখন আর আপনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

এ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচনের নামে তামাশা করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করেনি। ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে সরকার গঠন করেছে। একই কায়দায় ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বেআইনি ও অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বাতিল করেছে বলে দাবি করেন করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এ সরকার সহজে কথা শুনবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য, সোজা কথা যদি না শোনে তাহলে ফয়সালা হবে রাজপথে। আসুন, সে লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তাঁর মুক্তিসহ ‘এক দফা’ দাবিতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশ করে। পুরান ঢাকার এ সমাবেশে রাজধানীর দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মিছিল নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেয়। ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব লিটন মাহমুদ সমাবেশ পরিচালনা করেন।