প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা, তা সংরক্ষণে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। আমি তো বলেছি টোটাল কোটা বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় অবমাননা করলে তখন তো আমি কনটেম্পট অব কোর্টে পড়ে যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশন ২৫ কার্যদিবসের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়।
কোটা নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা যে কী চায় বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে এদের (আন্দোলনকারী) অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন? তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। আন্দোলনের নামে উশৃঙ্খলাটা তো বরদাশত করা যায় না। যতই আন্দোলন করুক, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এসব কাজ কোন শিক্ষার্থী করতে পারে না।

কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা যে কি চায় বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটা কিন্তু সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বুধবারই বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষণ থাকবে। আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে লঙ্ঘন করবো। কীভাবে হাইকোর্টের রায় বাদ দেব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। তবে তো হাইকোর্টের রায় অবমাননা হবে। তবে কোটা যেটাই থাকুক, কোটা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জায়গায় খালি থাকবে সেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে এবং সেটাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে আজকে তারা কথায় কথায় আন্দোলনের নামে ক্লাসে তালা দেয়, ক্লাস করবে না, পরীক্ষা দেবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে? সেশন জট আগে অনেক ছিল, অন্তত আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেশন জট দূর করেছি। সেশন জট ছিল না। কিন্তু এখন তাদের (আন্দোলনকারী) কারণেই আজকে আবার সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আমরা করবো। আমি তো বললাম সব বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রয়েছে। হাইকোর্টের রায় আমি অবমাননা করলে তখন তো আমি আদালত অবমাননায় পড়ে যাবো। এটা কেউ করতে পারবে না। আমরা মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টার সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজার দর আছে সেইভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙ্গে ফেলবে, মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কী আন্দোলন? উশৃঙ্খলাটা তো বরদাশত করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভিসির বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল, হামলার সময় সেটা ভেঙ্গে ফেলেছে। চিপটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে যেন হামলাকারীদের দেখা না যায়। কিন্তু তারা জানতো না আশে পাশে আরও অনেক ক্যামেরা ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ছিল, সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একটা একটা করে হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখানে যারা ভাংচুর করেছি, অগ্নিসংযোগ করেছে- তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করেছে। যেখানেই যারা থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে, তারা যতই আন্দোলর করুক। তিনি বলেন, শিক্ষার নীতিমালা তো সরকার করবে। সেটা আমাদের দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। অনেক জায়গায় চাকরি খালি আছে, যারা মেধা তালিকায় থাকছে, কেউই বাদ যাচ্ছে না। যারাই মেধাবী তারা কোন কোনভাবে চাকুরি পাচ্ছে।