কৃষিজাত পণ্য নতুন খাত হিসেবে রপ্তানিতে আশা জোগাচ্ছিল । পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই খাতের রপ্তানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত দুই অর্থবছরে শতকোটি ডলার করে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় এ অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০৮ কোটি ডলার। তবে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ। এ সময়ে কৃষি ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ ৬০টিরও বেশি দেশে চিংড়ি এবং অন্যান্য হিমায়িত মাছ, জীবন্ত মাছ, কাঁকড়া, ফল, সবজি, তামাক, চা ও মশলা এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজিও রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বছরখানেক ধরে অধিকাংশ গন্তব্যে জাহাজ ভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্যাকেজিং পণ্যের দাম ৩৭ শতাংশ, ডলারের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আর সাম্প্রতিক সময়ে ময়দার দাম ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি। এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অধিকাংশ কারখানা হারিয়েছে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারত বাংলাদেশি তাজা এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মূল আমদানিকারক। সাধারণত গ্রীষ্মে তাজা পণ্যের রপ্তানি কমে; কিন্তু শীতে বেড়ে যায়। তবে চলতি অর্থবছরে গ্রীষ্মের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। পণ্য পরিবহনে বেশি চার্জ, কম কার্গো স্থান এবং জুন-আগস্টে বন্যার কারণে উপযুক্ত সবজির অভাবের নেতিবাচক প্রভাব রপ্তানিতে পড়ে।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি। এতে রপ্তানিকারকের লাভ কমেছে। অনেকে রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু শীতকালীন সবজির দাম যৌক্তিক হয়ে যাওয়ায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে রপ্তানি পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এই ধারাতেও এ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করেন তিনি।

কৃষি ও মৎস্য রপ্তানিকারক শরিফুল আলম বলেন, বিমানে রপ্তানি পণ্য বহনে চার্জ প্রতি কেজিতে ২.৫ ডলার গুনতে হচ্ছে, যা প্রতিযোগী ভারত এবং থাইল্যান্ডের জন্য প্রতি কেজি ২.০ ডলারের বেশি। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে উচ্চমূল্য এবং মালবাহী পণ্যে বেশি চার্জ মাঝারি মানের ব্যবসায়ীদের রপ্তানিতে জড়িত হতে নিরুৎসাহিত করছে।

ইপিবির তথ্যানুসারে দেশের রপ্তানিকারকরা জুলাই-নভেম্বর সময়ে কৃষিপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে ৪২৯ মিলিয়ন (৪২ কোটি ৯০ লাখ) ডলার আয় করেছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে ছিল ৫৫৭ মিলিয়ন (৫৫ কোটি ৭০ লাখ) ছিল। একই সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি ৪৪৮ মিলিয়ন (৪৪ কোটি ৮০ লাখ) থেকে কমে ২৮২ মিলিয়ন (২৮ কোটি ২০ লাখ) ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি আমিন উল্লাহ জানান, চিংড়ি এবং অন্যান্য হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ইউরোপে চাহিদা কমে যাওয়া। এ ছাড়া স্থানীয় চিংড়ির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন কমে যাওয়াও রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ। সূত্র আমাদের সময়