রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা ছিল আগামী বছর। কিন্তু বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানালেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে।

আজ বৃহস্পতিবার রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) উন্নয়ন অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

advertisement
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কাজের অগ্রগতি অনেক সন্তোষজনক। প্রথম ইউনিটের কাজ ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও এগিয়ে চলছে।’

advertisement 4
২০২৩ সালের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পেছাল কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘করোনার কারণে সঞ্চালন লাইনের কাজ কিছুটা ব্যহত হয়েছে। যথাসময়ে দরপত্র চূড়ান্ত করা যায়নি। এ কারণে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বাণিজ্যিক উৎপাদনে। আজকে আমরা বসে কথা বলে ২০২৪ সালে উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয় চুক্তির খসড়া (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) প্রস্তুত হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যেই চুক্তি সম্পাদন করা হবে।’

বিদ্যুতের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই চূড়ান্তভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ইউনিট প্রতি দর ৪ থেকে ৫ টাকার মতো হবে। পরমাণু বিদ্যুতে সবচেয়ে সুবিধার দিক হচ্ছে ৬০ বছর এর দর কোনো ওঠা-নামা করবে না। আমরা একই দরে ৬০ বছর বিদ্যুৎ পাব। অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুতের দর ওঠানামা করে। দাম বাড়াতে কমাতে হয়।’

রাশিয়ান ভাগে কাজের গতি মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও জার্মানি প্রতিষ্ঠান সিমেন্স কাজকে জটিল করে তুলেছে। সিমেন্স ২৩৩/৪০০ কেভি জিআইএস সাবস্টেশন সরবরাহ করার কথা। আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্প্রতি সাবস্টেশন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কাজটির জন্য নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে চীনা কোম্পানিকে। তারা ২০২৩ সালের নভেম্বরে সরবরাহ করবে। অন্যদিকে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারছে না।

তবে বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালের মধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ করে ফেলব। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে চাই। দুই মন্ত্রণালয়ের বসে সময় চূড়ান্ত করা হবে।’

রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিক কোনো সংকট রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আর্থিক বিষয়ে ডিল করছি না। রাশিয়ানরা সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দিয়ে থাকেন। সে কারণে তারা বিষয়টি বলতে পারবে। আমরা কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। কাজ দ্রুতগতিতে চলমান রয়েছে।’

১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচের এই প্রকল্পে ৯০ ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একইসঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রূশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং একই পরিমাণ বিদ্যুৎ দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসার কথা ছিল ।

বর্তমানে পৃথিবীর ৩০টি দেশে ৪৪৯টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের প্রায় ১২ শতাংশ। ১৪টি দেশে আরও ৬৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭টি দেশে ১৭৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই নির্মাণ করা হবে পরমাণু বিশ্বে নবাগত দেশসমূহে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

আর্থিক অঙ্কে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রকল্প। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। রূপপুর ছাড়াও বাংলাদেশ আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছে।

রূপপুর প্রকল্পটিতে প্রতিদিন স্থানীয় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রকল্পটির নিরাপত্তার আন্তর্জাতিকমানের করা নিয়েও কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সহধর্মিনী ও ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সীমা হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর, পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম।