দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংযোজন ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রা গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল আকাক্সিক্ষত এই মেট্রোরেলের এদিন উদ্বোধন করেছেন। যা নিয়ে ঢাকাবাসী তথা গোটা দেশ এখন উদ্বেলিত। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ দিন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রা বর্তমান আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। প্রতিবেদনে মেগা সিটি ঢাকায় মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তাসহ প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

‘বিশ্বের অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ শহর পেল প্রথম মেট্রোরেল’ শীর্ষক ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ঢাকায় মানুষের যাতায়াতের

ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি এর উদ্বোধন শেখ হাসিনার সরকারকে অতিপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সুবিধাও দেবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এর মধ্যেই দক্ষিণ এশীয় দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে পড়েছে। ফলে শেখ হাসিনা ও তার দল চাপের মুখে রয়েছে। গতকাল মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে বাংলাদেশের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করেছে এবং এটি উন্নয়নের আরও একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। এদিন শেখ হাসিনা নিজেই প্রথম যাত্রী হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। মেট্রোরেল আজ বৃহস্পতিবার
থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে ব্লুমবার্গ লিখেছে, ৩০৫ বর্গকিলোমিটারের শহর ঢাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। দশ বছর আগে ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সেখান থেকে তা কমে হয়েছে সাত কিলোমিটার। কমতে কমতে এটি চার কিলোমিটারে নেমে যেতে পারে। যা হাঁটার চেয়েও ধীর। ঢাকার মেট্রোরেল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রমা বলেছিলেন, ‘ঢাকার মতো শহরের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উন্নয়ন। আপনি যদি ভারতের বিভিন্ন শহরের দিকে তাকান দেখবেন মানুষের কাজে যাওয়ার যোগাযোগ পথে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মেট্রোরেল যোগাযোগের নিরাপদ একটি বাহন। বিশেষ করে নারীদের জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় যা গতানুগতিক নয়। তবে মেট্রোরেলের কারণে ঢাকার যানজট এখনই চলে যাবে- এমন চিন্তা করা বোকামি হবে। কারণ কোনো যোগাযোগ স্থাপনা তৈরির পর রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের যে চাপ কমে, সেটি নতুন বাহনে আবারও ফিরে আসে।

এদিকে ঢাকায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের বিষয়টি আরও কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বেশ গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। ‘যানজট জর্জরিত ঢাকায় প্রথম মেট্রো লাইন চালু করল বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। সৌদি আরবের আল-আরাবিয়া লিখেছে, বিশ্বের অন্যতম যানজটপূর্ণ শহর ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেট্রোরেল চালুর পর প্রথম যাত্রী হিসেবে ভ্রমণও করেছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের খবরের শিরোনাম করেছে, ‘যানজট থেকে মুক্তি, ঢাকায় শুরু মেট্রো পরিসেবা, সবুজ পতাকা নেড়ে উদ্বোধন শেখ হাসিনার’। বিবিসি লিখেছে, এক দশক আগে নেওয়া এই প্রকল্পটি আংশিক এবং সীমিত আকারে চালু হলো। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো লাইনের বাকি অংশ আগামী বছরে শেষ করার আশা করলেও কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশ মিলিয়ে প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ করতে ২০২৫ সাল হতে পারে। জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে খবরের শিরোনাম করেছে, ‘মেট্রোরেল খুলে দিল বাংলাদেশের নতুন দুয়ার’। খবরে বলা হয়, রাজধানীর চিরচেনা যানজট এড়াতে সাড়ে ছয় বছর আগে উত্তরায় দেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষে এসে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তা পরিণতি পেল।