আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর , বিষাদ আর বিচ্ছিন্নতার বছর ২০২০ বিদায় নিবে। বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে মহামারীর তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আজকের রাত পেরিয়ে ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। আর নতুন বছর নিয়ে মানুষ আশায় বুক বাঁধবে। করোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে।সময়ের বৃক্ষ থেকে আরও একটি পত্র ঝরে যাবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যবনিকা পতন হবে ২০২০ সালের। শুরু হবে নতুন বছর ২০২২-এর।

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এ বছরের সমাপ্তি ঘটছে। বছরজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির অভিযাত, সরকারের দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বস্তিতে একের পর এক আগুন, সারা দেশে ধর্ষণকাণ্ড, করোনাকালীন ফাঁকা ঢাকা ও কভিড-১৯ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবাসহ নানা ঘটনা।

গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি থেকে ক্ষণগণনার মাধ্যমে মুজিববর্ষের আয়োজন শুরু হয়। ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘটা করে উদযাপন করা হবে—এমনই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৭ মার্চের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে করা না যাওয়ায় মুজিববর্ষের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মহামারির বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর তৈরি করা হয় অবরুদ্ধ অবস্থা, যেকোনো সমাবেশের ওপর আসে নিষেধাজ্ঞা।

অন্য সব নির্বাচন বন্ধ থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে সংসদের কয়েকটি আসনের উপনির্বাচন মহামারিকালেও করেছে নির্বাচন কমিশন। লক্ষ্যহীন রাজনীতির কারণে বিএনপিসহ বিরোধী জোটে সংকট গত বছরের মতো চলতি বছরেও প্রকট হয়েছে। বছরের মাঝামাঝিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর সরব হয়েছিল বাম দলগুলো। চলতি বছর ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলে হেফাজত বছরের শেষ ভাগে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করে। কভিডের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ইভেন্ট, ম্যাচ, টুর্নামেন্ট বাতিল হয়েছে। সম্ভাব্য তুমুল ব্যস্ততার বছরে দেশের সব খেলায়ই পড়েছে লম্বা বিরতি। ক্রিকেট দলের ১০টি টেস্ট খেলার কথা ছিল এবার। খেলেছে দুই টেস্ট। মাত্র তিনটি ওয়ানডে খেলতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব একাদশ ও অবশিষ্ট এশিয়া একাদশের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়নি। প্রতিযাগিতামূলক ক্রিকেট আবার মাঠে গড়ায় অক্টোবরে প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে হয়ে গেল পাঁচ দল নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। ফুটবলে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মিলিয়ে তিনটি প্রতিযোগিতা পুরোপুরি শেষ হতে পেরেছে এ বছর। জানুয়ারিতে হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমি ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ দল। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বাকি খেলাগুলোতেও।

করোনার কারণে অর্থনীতির গতি যেন অনেকটাই থমকে গেছে। মহামারির আঘাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বিদায়ি বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অর্থনীতির ক্ষতি সামাল দিতে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামনে রেখে আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বছরজুড়েই বাজার ভুগিয়েছে ভোক্তাদের। এ বছর অনেক গুণীজনকে হারিয়েছি আমরা। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছর ২০২১ উপলক্ষে দেশবাসী এবং প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রকৃতির নিয়মেই যেমন নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, তেমনি অতীত-ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পুরনো স্মৃতি-সম্ভারে হারিয়ে যাওয়ার চিরায়ত স্বভাব কখনও আনন্দ দেয়, আর কখনোবা কৃতকর্মের শিক্ষা নব-উদ্যোমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।

ভালো নয়, মহামারির মন্দায় ম্লান ২০২০ বিদায় নিচ্ছে। আসছে ২০২১। নতুন বছর ধরণী কভিডমুক্ত হোক, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা।