বিড়ালের জন্য তৈরি করা ওষুধ করোনা প্রতিরোধে কাজ করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। বিড়ালের জন্য তৈরি ‘জিসি৩৭৬’ ওষুধটি বিড়ালের অসুস্থতা দূর করতে তৈরি করা হয়েছিল। বিড়ালের এই অসুস্থতার নাম ‘ফেলিন ইনফেকশাস পেরিটোনিটিজ’ এবং এই অসুস্থতা অন্ত্র থেকে শুরু হয়। পরে এটা বিড়ালের মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং তখন খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিড়ালের এই অসুস্থতা হয়ে থাকে করোনাভাইরাসের কয়েকটি উপসর্গের কারণে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণ করেছেন যে, ‘এই ওষুধটি (জিসি৩৭৬) কোভিড-১৯ বিনাশ করতে সক্ষম।’ এটা এখনো মানুষের দেহে পরীক্ষা (ট্রায়াল) করা হয়নি।

তা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা অ্যান্টি ভাইরাল হিসেবে কাজ করে। তারা বলছেন, মানুষের দেহে এই ওষুধটি দ্রুত পরীক্ষা চালানো হোক। এই মুহূর্তে এমন কোনো ওষুধ নেই যা দিয়ে করোনাভাইরাসকে দমন করা যায়। তবে আইসিইউর মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ডেক্সামেথাসন (এটা একটি স্টেরয়েড) কিছুটা কাজ করে। উল্লেখ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার বিরুদ্ধে ১২৫টি টিকা তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে আটটি টিকা মানুষের মধ্যে (হিউম্যান ট্রায়াল) দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ করেছে। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, আমেরিকার মডার্না, জার্মানির একটি এবং চীনের সিনোভ্যাক ও ক্যানসিনোর টিকা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করেছে। অবশ্য আগের চেয়ে করোনা আক্রান্তরা সুস্থ হচ্ছেন বেশি কিন্তু করোনা দমনে নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনো নেই। বিড়ালের ফেলিন ইনফেকশাস পেরিটোনিটিজের ওষুধটি এর উৎপাদনকারী কোম্পানি ‘অ্যানিভাইভ’ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (ইউএস এফডিএ) কাছে কোভিড-১৯ এর ওষুধ হিসেবে মানুষের মধ্যে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে।

গবেষকরা বিড়ালের মধ্যে থাকা করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গের বিরুদ্ধে কার্যকর এমন একটি ওষুধের ল্যাব পরীক্ষায় দেখেছেন যে, এটা কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার গবেষকরা দেখেছেন যে, বিড়ালের জন্য তৈরি ওই ওষুধটি ফেলিন এন্টেরিক করোনাভাইরাসের (এফকভ) একটি এনজাইমকে ব্লক করে দিতে পারে। এটা ভাইরাসের পুনঃ উৎপাদন প্রক্রিয়াকেও বন্ধ করে দিতে পারে। এই ভাইরাসটি বিড়ালের পাকস্থলীতে কার্যকর হলে পরবর্তীতে বিড়ালের গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয় এবং বিড়াল মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ফেলিন ইনফেকশাস পেরিটোনিটিজ ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিড়ালকে আক্রান্ত করে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এফকভ ভাইরাসের গঠন সার্সকভ-২ ভাইরাসের গঠনের মতোই। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এফকভের ওই ওষুধ সার্সকভ-২ (বহুল ব্যবহৃত শব্দ করোনা) ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে দেখেছেন যে, এটা এখানেও কার্যকর।

জিসি৩৭৬ প্রয়োগ করে তারা দেখেছেন যে, এই ওষুধটি করোনাভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি বন্ধ করে দিতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাস অকার্যকর হয়ে পড়ে। আলবার্টার বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিড়ালের করোনার বিরুদ্ধে তৈরি এর আগের ওষুধ ‘জিসি৩৭৩’ ভার্সনের ওষুধটিও মানুষকে আক্রান্ত করা করোনাভাইরাসকে একই রকম অকার্যকর করে দিতে পারে। আলবার্টার বিজ্ঞানী প্রফেসর জেনি লেমিউক্স জার্নালে লিখেছেন যে, এই জিসি ৩৭৩ ও জিসি ৩৭৬ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া করোনাভাইরাসের পুনঃ উৎপাদনকে বাধা প্রদান করতে পারে। এ কারণে এই দুইটি ওষুধ মানুষের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ওষুধ হতে পারে। কারণ এই ওষুধটি প্রাণীর মধ্যে সফলতার সাথে কার্যকর রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিড়ালের ভাইরাসের এই ওষুধটির আরেকটি ইতিবাচক দিক আবিষ্কার করেছেন এবং তা হলো, এটা মানুষের কোষের জন্য ‘টক্সিক’ হয়ে ওঠে না। প্রফেসর জেনি বলেন, এই ওষুধটি সরাসরি মানুষের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এটা মানুষের মধ্যে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে এই ওষুধটি যত দ্রুত সম্ভব মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ এর ওষুধ হিসেবে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা হোক। বিড়ালের এই ওষুধটির একটি গবেষণা ‘ন্যাচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই সম্বন্ধীয় বিস্তারিত একটি বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট গত ২৭ আগস্ট ছাপা হয়েছে ব্রিটেনের মেইল অনলাইনে।