কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর চান্দোলারপাড় গ্রামে স্বামীর টানে ভারত থেকে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন এক ভারতীয় নারী।

ভারতে থেকে আসার সময়ে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ৩ বছরের সন্তানকেও। গত একমাস ধরে স্বামীর ভিটায় অবস্থান করলেও বিষয়টি জানাজানি হলে চরম আতঙ্কে রয়েছেন সন্তানসহ ওই নারী। বর্তমানে এলাকায় বিজিবি টহলদল অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মন্ডল জানান, ওই নারী ভারতের বঞ্চাশপুর ছত্রিশগড় রাজ্যের মঙ্গলী জেলার জেড়াগাঁও থানার মৃত ফাগুরাম সাউ ও রাজকুমারী দম্পতির মেয়ে শ্রীমতি সুনিয়া সাউ (২৯)।

২০০৬ সালে একই রাজ্যের ধনউড়া এলাকার রোহিত শর্মার সাথে তার বিয়ে হয়। সেই সংসারে তার ২ সন্তান রয়েছে। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানার কাশিপুর ইউনিয়নের মৃত আবুল কাসেম আলীর পুত্র রাজমিস্ত্রী ওবাইদুল হক (৩৫) বৈধ ভিসা নিয়ে ওই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন।

২০১৬ সালের শেষের দিকে সুনিয়া সাউ’র সাথে ওবায়দুলের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্ক জানতে পেরে রোহিত শর্মার সাথে সুনিয়া সাউ’র ছাড়াছাড়ি হয়। এসময় ওবায়দুলকে বিয়ে করে দিল্লীতে পাড়ি জমায় সুনিয়া সাউ। সেখানে চার বছর ধরে সংসার করছিল তারা। তাদের সংসারে তিন বছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে।

তবে করোনার কারণে ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে হয় ওবায়দুলকে। ইতোমধ্যে ওবায়দুল তার প্রথম স্ত্রীকে সুনিয়া সাউ’র ব্যাপারে কথা বলে তার মতামত নেয়। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি পেয়ে দালালদের মাধ্যমে এক মাস আগে কুড়িগ্রামে নিজ বাড়িতে সুনিয়া সাউ ও তার পুত্রকে নিয়ে আসে ওবায়দুল।

ভালই চলছিল তাদের সংসার। এরমধ্যে পারিবারিক কলহের সুত্র ধরে ওবায়দুলের ভারতীয় স্ত্রী’র বিষয়টি প্রতিবেশীদের নজরে আসে। এরপরই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ওবায়দুলের ভারতীয় স্ত্রীর বাংলদেশে আসার ঘটনাটি।

ওবায়দুলের জানায়, আমি বৈধভাবে তাকে বিয়ে করেছি। সে নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে সংসার করছে। এনিয়ে আমার প্রথম স্ত্রী কল্পনা বেগমের কোন আপত্তি ছিলো না। প্রতিবেশীরা বিষয়টি ঘোলাটে করেছে। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করেন।

ভারতীয় নারী সুনিয়া সাউ জানান, প্রেম করে চার বছর আগেই ভারতের দিল্লীতে আমরা বিয়ে করেছি। আমি জন্মভুমি ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে এসেছি। আমার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাই আমি এখানেই ঘর-সংসার করে থাকতে চাই।

লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএন তৌহিদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারতীয় ওই নারী বাংলাদেশে প্রবেশের বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। শুধুমাত্র ভারতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। সে দোভাষী। তাকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হবে। এছাড়াও বিএসএফকে অবগত করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ রাজীব কুমার রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।