শক্তির বিচারে বায়ার্ন মিউনিখ ও প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) সমানে-সমান। দু’দলের মধ্যে কাউকেই ফেভারিট বলা যাবে না ২০১৯-২০ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। তবে বুন্দেসলিগার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বলছে, পাঁচ কারণে রোববারের ফাইনালে পিএসজিকে হারাবে বায়ার্ন মিউনিখ।

লেভানদোস্কির নেতৃত্বে বিধ্বংসী আক্রমণভাগ
‘পোলিশ গোলমেশিন’ খ্যাত রবার্ট লেভানদোস্কি চলতি মৌসুমে ১৫ গোল করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগে। সব প্রতিযোগিতায় তার গোল ৫৫টি। তবে লেভানদোস্কিই বায়ার্নের একমাত্র অস্ত্র নয়। সার্জি নাব্রির কথা ভুলে গেলে চলবে না- সেমিফাইনালে জোড়া গোল করে নাব্রি পিএসজিকে যেন সে বার্তাই দিয়ে রেখেছেন। গ্রুপ পর্বে টটেনহ্যামের বিপক্ষে একাই ৪ গোল করেছিলেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তৃতীয় সর্বাধিক ৯ গোল নাব্রির।
বার্সেলোনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে টমাস মুলার-ফিলিপে কুটিনহো উভয়ে করেছিলেন জোড়া গোল। তাদেরকে হিসাবে মধ্যে রাখতে হবে পিএসজি ডিফেন্ডারদের।

‘গোপন অস্ত্র’ আলফোন্সো ডেভিস
এক বছর আগেও তিনি ছিলেন বায়ার্নের যুব দলের খেলোয়াড়। এখন হয়ে উঠেছেন মূল দলের রক্ষণের ভরসা। শুধু কি রক্ষণ? ১৯ বছর বয়সী ডেভিস গতি আর স্কিলেও নজর কেড়েছেন সবার। বর্তমানে বুন্দেসলিগার দ্রুততম (২২.৭ কি.মি/ঘণ্টা) খেলোয়াড় তিনি। সতীর্থরা তার নাম দিয়েছে ‘রোড রানার’। বার্সেলোনার বিপক্ষে জশোয়া কিমিখের করা পঞ্চম গোলটিতে ডেভিসের অ্যাসিস্ট ছিল চোখধাঁধানো।


লিওনেল মেসি ও আর্তুরো ভিদালকে পরাস্ত করার পর ডিবক্সে বার্সা ডিফেন্ডার নেলসন সেমেদোকে ঘোল খাইয়ে কিমিখকে পাস দেন ডেভিস। ম্যাচের প
র বায়ার্নের আরেক ডিফেন্ডার জেরোম বোয়েটাং বলেছিলেন, ‘ওয়াও! ওটা ছিল বিশ্বমানের অ্যাসিস্ট।’

টানা ২৮ জয় ও ৯৭ গোল
নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় পার করছে বায়ার্ন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ ম্যাচের ২৮টিতেই জিতেছে তারা (একটি ম্যাচ ড্র করেছে)। গোল দিয়েছে ৯৭টি। হজম করেছে মাত্র ২২টি।

সমৃদ্ধ ইতিহাস
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বায়ার্নের ইতিহাস সমৃদ্ধ। এর আগে ১০ বার ফাইনাল খেলে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা (১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ২০০১ ও ২০১৩)। পিএসজি এবারই প্রথম ফাইনাল খেলছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে।

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য বলতে ১৯৯৬ উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ও ২০০১ ইন্টারটটো কাপ জয়। ফলে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে বায়ার্ন।

ফ্লিকের ট্যাকটিস
আপাতত হাইপ্রোফাইল কোচদের তালিকায় তার নাম নেই। তবে হ্যানসি ফ্লিকের নাম শিগগিরই ক্লপ-জিদানদের কাতারে উঠে যাবে। গত নভেম্বরে বায়ার্নের দায়িত্ব নেন ৫৫ বছর বয়সী এই জার্মান। নিকো কোভাচের অধীনে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বায়ার্ন ফ্লিকের ছোঁয়ায় আমূল বদলে যায়। হাইলাইন ডিফেন্স, প্রেসিং, ওয়ান-টাচ অ্যাটাকে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা ওলট-পালট করে দিচ্ছে দলটি। যেমনটি দেখা গেছে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৮-২ গোলের জয়ে। এমনকি সেমিফাইনালে লিঁওর বিপক্ষেও একই কৌশল প্রয়োগ করে সফল ফ্লিক। সঙ্গে বল পজিশনটাও গুরুত্ব দেন তিনি। লিঁওর বিপক্ষে ৬৪ শতাংশ বল দখলে রাখে বায়ার্ন। পাস খেলেছে প্রায় তাদের দ্বিগুণ।
বায়ার্ন সিইও কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘আমরা শুধু জয়ই পাচ্ছি না, দৃষ্টিনন্দন ফুটবলও উপহার দিচ্ছি। লুইস ভ্যান গাল, ইয়ুপ হেইঙ্কেস ও পেপ গার্দিওলার মতো গ্রেট কোচদের পর আমরা আরেকটি সফল যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছি।’

ফ্লিক ইতিমধ্যেই বুন্দেসলিগা ও জার্মান কাপ জিতিয়েছেন বায়ার্নকে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতলে ২০১৩ সালে হেইঙ্কেসের পর বাভারিয়ানদের দ্বিতীয় কোচ হিসেবে ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখাবেন তিনি।