রূপকথার মতো অসাধারণ এক যাত্রায় দারুণ ফুটবল উপহার দিয়ে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল জার্মান ক্লাব আরবি লাইপজিগ। তবে শেষ চারে এসে থেকে তাদের গল্প থামিয়ে দিয়েছে ফরাসি চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। জন্ম দিয়েছে নতুন রূপকথার। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকেট কেটেছে নেইমার-ডি মারিয়ারা।

মঙ্গলবার লিসবনে চলতি মৌসুমে চমক দেখানো জার্মান দল লাইপজিগকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে ফাইলনালে উঠেছে পিএসজি।

নিষেধাজ্ঞা থেকে এদিন ফিরেছিলেন দলের অন্যতম সেরা তারকা আনহেল দি মারিয়া। আর ইনজুরি থেকে সম্পূর্ণ ফিট হওয়া কিলিয়ান এমবাপেও শুরু থেকে পায় পিএসজি। যদিও নিয়মিত গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে পায়নি তারা। তবে আক্রমণভাগের সেরা তারকাদের ফেরত পেয়ে শুরু থেকেই গোছানো ফুটবল উপহার দেয় টমাস টুখেলের দল। লাইপজিগকে রীতিমতো উড়িয়ে দেয় তারা।

ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই এদিন এগিয়ে যেতে পারতো ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু অবিশ্বাস্য এক মিস করেন নেইমার। সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ফাঁকায় এ ব্রাজিলিয়ান থ্রু বাড়িয়েছিলেন এমবাপে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু তার শট বারপোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়।

এগিয়ে যেতে অবশ্য খুব বেশি সময়ে নেয়নি ফরাসি দলটি। ১৩তম মিনিটে সেটপিস থেকে গোল পায় দলটি। এন্দের এররেরার ক্রস থেকে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন মারকুইনোস।

তিন মিনিট পরই ব্যবধান বাড়াতে পারতো পিএসজি। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন এমবাপে। এররেরার আরও দারুণ পাস থেকে বল যে শট নেন এ ফরাসি তরুণ, তা গোলরক্ষক পিটার গুলাস্কির গায়ে লেগে বেরিয়ে যায়।

২৫তম মিনিটে গোল শোধের ভালো সুযোগ পেয়েছিল লাইপজিগ। নিজেদের অর্ধ থেকে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ইউসুফ পোলসেনকে কাটব্যাক করেছিলেন কোনরাড লেইমার। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি এ ডেনিশ তারকা। নয় মিনিট পর ডান প্রান্ত থেকে প্রায় ৩৫ গজ থেকে নেওয়া নেইমারের ফ্রিকিক বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে।

৪২তম মিনিটে গোলরক্ষকের ভুলে দ্বিতীয় গোল হজম করে লাইপজিগ। ঠিকভাবে পাস দিতে ব্যর্থ হলে ডি-বক্সের বাইরে বল ধরে ফেলেন লিওন্দ্রো পারাদেস। তার বাড়ানো বল নেইমার দারুণ এক ব্যাকহিলে এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পাস দেন দি মারিয়াকে। আর বল পেয়ে আলতো টোকায় জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি এ আর্জেন্টাইন।

দুই মিনিট পর ব্যবধান আরও বাড়তে পারতো। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেইমারকে অসাধারণ এক পাস দিয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু এ ব্রাজিলিয়ানের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

দ্বিতীয়ার্ধে পেট্রিক চিকের পরিবর্তে এমিল ফোর্সবার্গকে মাঠে নামান লাইপজিগ কোচ কোচ জুলিয়ান নাগেলসমান। তাতে যেন প্রাণ পায় দলটির মধ্যভাগ। ব্যবধান কমাতে পিএসজিকে চেপে ধরে দলটি। তবে অনেকটা ধারার বিপরীতে ৫৪তম মিনিটে আরও একটি গোল আদায় করে নেয় পিএসজি। কর্নার থেকে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন হুয়ান বেরনাত।

৭০তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ মিস করেন এমবাপে। ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। দুই মিনিট পর এদি মারিয়ার পাস থেকে আরও একটি ভালো সুযোগ ছিল তার। কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে সে সুযোগ নষ্ট করেন বিশ্বকাপ জয়ী এ ফরাসি তারকা। পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনো। তবে প্রস্তুত ছিলেন গোলরক্ষক সের্জিও রিকো।

৮০তম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে নেইমারের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ভালো শট নিয়েছিলেন দি মারিয়া। তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন লাইপজিগ গোলরক্ষক গুলাস্কি। ফিরতি বলে আরও একটি অসাধারণ শট নিয়েছিলেন পারাদেস। তার শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন এ গোলরক্ষক।

পরের মিনিটে লুকাস ক্লসটারমানের ভুলে প্রায় গোল হজম করে ফেলেছিল লাইপজিগ। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক গুলাস্কি। শেষ দিকে গোল শোধ করার জন্য পিএসজির অর্ধে দারুণ চাপ সৃষ্টি করলেও গোল পায়নি লাইপজিগ। ফলে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট পায় পিএসজি।