টেকনাফ থানার সদ্য প্রত্যাহার করা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষবাণিজ্য ও লুটপাটের হাতিয়ার ছিল কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার। ইয়াবার এ প্রবেশদ্বার টেকনাফে ক্রসফায়ারের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন পুলিশের এই সাবেক ওসি।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ককে কার্যত ডেথ জোনে পরিণত করেন তিনি। আতঙ্কে রাতে এ সড়কে চলাচলে মারাত্মক ভীতির সঞ্চার হয় স্থানীয়দের মধ্যে। চাহিদা মতো টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে তার নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন যারা, তারা তার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উখিয়ার মৌলভি বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাকে ধরে নেয়ার সেই রাতে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে ৫১ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৌলভি বখতিয়ারের এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় আরও বিপুল অঙ্কের টাকা।

২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ক্রসফায়ারের পরিসংখ্যান।

গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ১৭৪ জন, বিজিবির সঙ্গে ৬২ জন ও র‌্যাবের সঙ্গে ৫১ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

আর টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে।

মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পর টেকনাফে পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের স্থলে জায়গা নেয় কথিত ‘ক্রসফায়ার-বাণিজ্য’। গত ২৪ জুলাই উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক ইয়াবা গডফাদার মৌলভি বখতিয়ার নামের এক ইউপি সদস্যকে ধরে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক কের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় তাকে।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অভিযান চালিয়ে মৌলভি বখতিয়ারসহ তাহের নামের আরও এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেন ওই রাতে। একদিন পর দুজনের ভাগ্যে জোটে কথিত বন্দুকযুদ্ধ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, মৌলভি বখতিয়ারের ঘর থেকে ১০ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

এভাবে চলে আসছিল বন্দুকযুদ্ধের নামে ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ারে মানুষ খুন, সম্পদ লুটপাট ও ঘুষ বাণিজ্য।

ওসি প্রদীপের ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ার বাণিজ্য সম্পর্কে মাথিনের কূপ নামক আইডি সহ বিভিন্ন আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারি হয়েছে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া ও লুটপাটের কিছু তথ্য।

এতে দেখা যায় অর্ধশতাধিক পরিবার থেকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওসি প্রদীপ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এতেই আঁচ করা যায় গত দুই বছরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কি পরিমান টাকা ও সম্পদ লুটপাট করেছে ওসি প্রদীপ।

আর লুটপাট করা এই সম্পদ দিয়ে দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে ওসি প্রদীপ। তাকে অবিলম্ব গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গুলো খুজে বের করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।