মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এক লিবিয়ান নাগরিকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‍্যাব ও এনএসআইয়ের যৌথ অভিযানে, রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হোতা মনির হাওলাদার ওরফে মনির ও সেলিম শিকদার ওরফে সেলিমকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাদের গ্রেফতার করে। এ ছাড়া মঙ্গলবার হাতিরঝিল এলাকা থেকে মানব পাচার, অবৈধ কর্মকাণ্ড ও বাংলাদেশের ভিসার শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে লিবিয়ার নাগরিক সামির আহমেদ ওমর ফরাজ এবং পল্টন থেকে এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আব্দুল গোফরানসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র‌্যাব-৩ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আব্দুল গোফরান সুফি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ারম্যান। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুরে।
গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে পাচারকারীরা জিম্মির পর গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করে। আহত হন ১১ বাংলাদেশি। ওই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৭১ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবি জানিয়েছে, ডিবির গুলশান বিভাগ বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে মনির হাওলাদার ও সেলিমকে গ্রেফতার করে। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তারা মতিঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তারাসহ তাদের অপর সহযোগীরা মিলে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফেনী, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজসরল মানুষকে টার্গেট করে বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠিয়েছে। মনির হাওলাদার অল্প সময়ের মধ্যেই লিবিয়ার মিলিশিয়া, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি তাদের সহযোগিতায় প্রত্যক্ষভাবে বেনগাজির মাঝুরি, ত্রিপোলির সুলেমান এবং জোয়ারার গেইমিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন। মনির ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনবার লিবিয়ায় যান। সেখানে প্রথমে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে মানব পাচার শুরু করেন বাংলাদেশ থেকে। জনপ্রতি চার লাখ টাকা নিতেন। দালাল শরীফ ও কবিরদের পরিচালিত স্বাধীন ট্রাভেলসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতাধিক লোককে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় নিয়ে গেছেন তিনি। দুবাই হয়ে লোকজন বেনগাজিতে পৌঁছার পর মনির দফায় দফায় তাদের বন্দিশালায় আটকে রাখতেন। বন্দিশালায় মারধর করা হতো। মারধরের ভিডিও স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এর পর দেশে স্বজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন।
লিবিয়া নাগরিকসহ গ্রেফতার ৬ :গত মঙ্গলবার হাতিরঝিল ও পল্টন থেকে র‌্যাব-৩ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে একজন লিবিয়া নাগরিকসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মানব পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি এমনকি প্রাণহানির শিকার হয়েছে এ দেশের অনেক তরুণ। র‌্যাবের ব্যাপক মানব পাচারবিরোধী অভিযানের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মানব পাচারকারী চক্রের দালালরা। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি মানব পাচারের মতো অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। লিবিয়ার নাগরিক সামির আহমেদ ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। বিধিবহির্ভূতভাবে ইনভেস্টর (ডিআই)/এমপ্লয়মেন্ট (ই)/ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণ না করে সুফি ইন্টারন্যাশনাল নামে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবৈধভাবে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তিনি। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইতালিতে লোক পাঠান। এ ছাড়া লিবিয়ায় তাদের নিজেদের বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রতি বছর নিয়োগ ও অধিক বেতনের প্রলোভনে মানুষ সংগ্রহ করেন তারা।