যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রথমবারের মতো জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধ পাওয়া গেছে। আর তা হলো স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামেথাসোন। যা বিগত কয়েক যুগ ধরেই বাজারে বিদ্যমান এবং দামেও কম। হাল্কা ডোজের এই স্টেরয়েড করোনায় আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের এক তৃতীয়াংশের প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে।

এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর বুধবার এই ওষুধকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়াসুস বলেছেন, ‘আমরা একটি ভালো খবর পেয়েছি। যুক্তরাজ্যে একটি ওষুধের প্রাথমিক ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল এসেছে। করোনাভাইরাসে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন নামক একটি কমন স্টেরয়েড প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘গবেষকরা তাদের প্রাথমিক গবেষণায় যে ফল পেয়েছিল সেটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিল। সেটা থেকে জানা গিয়েছিল যে যেসব রোগী আইসিইউতে ভর্তি এবং যাদের ভেন্টিলেশন প্রয়োজন হচ্ছিল, ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রতি পাঁচজনে একজন মারা গেছে। এটা আসলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য সুখবর। তবে, নিবিড় মেডিকেল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই কেবল এই ওষুধটি প্রয়োগ করে দেখা উচিত।’

যদিও ওষুধটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন গবেষকরা। ডেক্সামেথাসনের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইজারল্যান্ড আরো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ব্রিটেন। দেশটিতে করোনারোগীদের ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্রিটেন রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসনের মজুদ ২ লাখ ৪০ হাজার ডোজ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিশ্বের অনেক দেশই ওষুধটির মজুদ বাড়াচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কেবল গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রেই ওষুধটি ব্যবহার করা উচিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গবেষকরাও ওষুধটি গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহারের কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, ডেক্সামেথাসোন ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ এবং অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি এক পঞ্চমাংশ কমাতে সক্ষম।

জাতিসংঘের এই সংস্থাটির কোভিড-১৯ বিষয়ক জরুরি কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ওষুধটি যেসব গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর বলে প্রমাণ হয়েছে, সেসব রোগীর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা উচিত। তিনি বলেন, মারাত্মক অসুস্থ ও গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদের ব্যবহারের জন্যই ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওষুধটির মাধ্যমে তারাই উপকৃত হতে পারেন। ব্রিটিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, মৃদু উপসর্গযুক্ত করোনারোগীদের ডেক্সামেথাসোন কোনো সাহায্য করে না। যাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় না তাদের এই ওষুধের প্রয়োজন নেই। এর আগে ডব্লিউএইচও জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ওষুধটি কীভাবে ও কখন ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে ক্লিনিক্যাল নির্দেশনা হালনাগাদ করা হবে। সূত্র: রয়টার্স।