কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় চাল কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল ২০২০) জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে আগামী ৩ মের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তার বদল কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকা আকতারকে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷

এদিকে সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে ১৫ টন চাল কেলেংকারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। চাল কেলেংকারিসহ ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরপরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে পেকুয়া থেকে প্রত্যাহার করে নতুন ইউএনও নিয়োগ দেয়।

তবে প্রত্যাহারের একদিন পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন সাঈকা সাহাদাত। তার দাবি, সরকারি বরাদ্দের চাল কালোবাজারির অভিযোগ থেকে চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

সাঈকা বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয়। আমি কারো সাথে কোন অবৈধ লেনদেনে জড়িত নই। টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৫ টন চাল আত্মসাতের একটি মামলা নিয়েই এখন সবাই আমার বিরুদ্ধে ক্ষীপ্ত হয়ে গেছে। আর তাকে বাঁচাতেই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেকুয়ার আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা! বিএনপি জামায়াতের শাসনামলে সালাউদ্দিন আহমেদ যখন ক্ষমতার শীর্ষে তখন এক বিখ্যাত ছাত্রলীগ নেতা ঠিকাদারির বড় বড় কাজ পেতেন। বলা হয়ে থাকে, অন্দর মহলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সূত্রেই সালাউদ্দিন আহমেদ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ব্যবসায়িক সুবিধা করে দিতেন। ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর পর সালাউদ্দিন আহমেদের নেক নজরে আসেন আরেক ছাত্রলীগ নেতা, যিনি পরে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে যান! পেকুয়ায় এখন যারা বিএনপি জামায়াত থেকে আওয়ামীলীগে ঢুকেছেন, তাদের স্বার্থ রক্ষা করেন ওই কৃষক লীগ নেতা। এ কারণেই আওয়ামীলীগে সালাউদ্দিন পন্থীদের সাথে বিরোধ রয়েছে আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান এমপি জাফর আলমের! আর সেই বিরোধ সূত্রেই ফেঁসে গেছেন পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদত!

ভারতে মামলাজটে আটকে থাকলেও প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ জনেরা এখন সরকারের উঁচু মহলের বাসিন্দা! আর সেই সূত্রে সালাউদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করে আছেন দাপটের সাথেই! পেকুয়ায় যারাই ইউএনও হিসেবে এসেছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে সালাউদ্দিন আহমেদের অনুসারীদের পাশেই থেকেছেন। কিন্তু সাঈকা সাহাদত সেটা করতেন না। তিনি আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি জাফর আলমকে গুরুত্ব দিয়েই কাজ করেছেন। এটাই কাল হয়েছে সদ্য প্রত্যাহৃত ইউএনও সাঈকা সাহাদতের! ১৫ টন চাল আত্মসাতের যে বিষয়টি সামনে এসেছে, সেটা দারুণ রহস্যজনক! এটি খুব গভীরভাবে তলিয়ে দেখা হয়নি। যেহেতু বর্তমান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠজন, সেহেতু চাল আত্মসাতের বিভাগীয় তদন্তের নামে অবাধ্য ইউএনও সাঈদা সাহাদতকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।