রাজনীতি | তারিখঃ এপ্রিল ২১, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3340 বার
পরিচয় গোপন করে দীর্ঘ সময় কলকাতায় পালিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের পর থেকে নতুন করে আলোচনায় আসে আরেক খুনি মোসলেহ উদ্দিন।
পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে অন্যতম মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নারকীয় ওই হত্যাকাণ্ডে বিপথগামী সেনাসদস্যের যে দলটি অংশ নেয় তার প্রথম সারিতে ছিল রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন।
এই মোসলেহ উদ্দিনকে নিয়েই যত ধম্রজাল। বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনও কি ‘সমীর দত্ত’ ছদ্মনামে পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপন করেছিলেন? বেনাপোল সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় তিনি নাকি ইউনানি চিকিৎসকের ছদ্মবেশে গাঢাকা দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। মাজেদ ধরা পড়ার খবর আসতেই তিনি মারা গেছেন, এমনই সংবাদ রটিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এলাকা ছেড়ে। এমন জল্পনা-কল্পনা নিয়ে উত্তাল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ।
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানান, ‘রোববার মাঝরাত থেকে মোসলেহ উদ্দিন নামে একজন অপরাধী নাকি আমরা আটক করেছি বলে সংবাদমাধ্যমের অনেক ফোন পেয়েছি। বাংলাদেশের সাংবাদিক বন্ধুরাও ফোন করেছেন। কিন্তু এমন কেউ আটক হননি বা আমরা কাউকে ধরে পুশব্যাক করার জন্য বিএসএফকে দেইনি। বুঝতে পারছি না, এটা গুজব না জল্পনা।’
পুলিশ সুপার রাতেই বনগাঁর কাছে ঠাকুরনগর নামে একটা গ্রামে পুলিশ পাঠান। সেখানে বাংলাদেশ থেকে বছর কয়েক আগে আসা ‘সমীর দত্ত’ নামে একজন ইউনানি চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়।
বছর পনেরো আগে তিনি ওই গ্রামে এলেও দিন কয়েক আগে কীভাবে মারা গেলেন, কে দেহ সৎকার করেছে তা পুলিশকে কেউ বলতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সমীর দত্তকে ঘিরে অনেক রহস্য রয়েছে। তবে এই মোসলেহ উদ্দিনকে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া হতে পারে। সেই বোঝাপড়ার সূত্র ধরে যদি রোববার রাতের অন্ধকারে বিএসএফের সাহায্যে সীমানা পেরিয়ে মোসলেহ উদ্দিনকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় তা হলে রাজ্যপুলিশের কিছু করার নেই। কারণ, সীমান্ত পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ।
এদিকে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের এক অফিসার চার দিন আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘মাজেদের মতো বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলেহ উদ্দিনও পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে আছে। দেখবেন শিগগিরই সেও ধরা পড়বে, ঢাকার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে তাকেও। আর বাংলাদেশের হাতে পড়লে দু’চার দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’
আত্মবিশ্বাসী সুরে সেদিন ওই দূতাবাস অফিসার কিছুটা মজা করেই বলেছিলেন, তিস্তার পানি দিতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেয়া এটাও হবে মোদি সরকারের তরফে বাংলা নববর্ষে একটা উপহার।
তবে মোসলেহ উদ্দিনের গ্রেফতারের খবরের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘আমরা শুনেছি, তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরই বিস্তারিত জানা যাবে।’
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মধ্যেই আছি।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ইন্টারপোলের ভারতীয় শাখা ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি) মোসলেহ উদ্দিন খানকে গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য এখনও বাংলাদেশকে দেয়নি।উৎস একুশে টিভি
Leave a Reply