করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমদ (৬৯) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে রবিবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মারা যান।

বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার এবং কার্যকরি সদস্য সাদী মিন্টু খবরটি নিশ্চিত করেছেন। কমিউনিটির এই জনপ্রিয় নেতার মৃত্যুতে নিউ ইয়র্ক প্রবাসীরা আরো শোকাতুর হয়ে পড়েছেন।

কামাল আহমেদের ভগ্নিপতি ফারুক চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে সাদি মিন্টু আরো জানিয়েছেন গত ৩০ মার্চ মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় সোসাইটির সভাপতিকে নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার একটি কিডনী বিকল হয়ে পড়লে শনিবার বিকালে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এর মধ্যে শনিবার দিবাগত রাতেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে ভোরের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে মরদেহ পাওয়া গেলে নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে নিজের জন্য কেনা কবরে কামাল আহমেদকে দাফন করা হবে। কমিউনিটির এই বিশিষ্ট নেতা সপরিবারে নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্ট এলাকায় থাকতেন। তিনি এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক ছিলেন।

বাংলাদেশে কামাল আহমদের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বাউরভাগ গ্রামে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কমিউনিটির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন কামাল আহমদ। জীবনভর যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে।

দেশেও রাজনীতিসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কামাল আহমদ। প্রবাসী হওয়ার পর জড়িয়ে পড়েন কমিউনিটির নানা কাজে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে প্রথম সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় দফায় তিনি সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব নেন।

কামাল আহমদের মৃত্যুতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ছবি পোস্ট করে অনেকেই শোক বাণী, শ্রদ্ধা, স্মৃতিচারণ ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছেন।

একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে নিউ ইয়র্কে স্বদেশিদের যেকোনো সমস্যায় ছুটে যেতেন কামাল আহমদ। কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সমস্যা থেকে শুরু করে, বিদ্বেষমূলক অপরাধসহ নানা সমস্যায় পড়া স্বদেশিদের খোঁজ-খবর নিতেন তিনি।

সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সোসাইটির দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি দুই দফা নিউ ইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ফিলাডেলফিয়া নগরে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন নিজস্ব বাড়ি ক্রয় করে।

কামাল আহমদের বাবা জিয়া উদ্দিন আহমদ পারিবারিক ভিসায় ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২৬ বছর বয়সে কামাল আহমেদ পারিবারিক অভিবাসনে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এরপর থেকে তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।সূত্র-কালের কন্ঠ