টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাণিজ্যিকভাবে টক বরই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষি সিদ্দিক হোসেন। টক বরই চাষ করে তিনি নিঃশ্ব থেকে লাখপতি হয়েছেন।

উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ইন্দারজানি খুইংগারচালা গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন। বিদেশ যাওয়ার পুঁজি হারিয়ে প্রথমে ‘বিকল্প নার্সারী’ নাম দিয়ে নার্সারীর ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

পরবর্তীতে এলাকার উঁচু জমিতে বাণিজ্যিকভাবে টক বরই (কুল) চাষ শুরু করেন। চলতি বছর তার ২৫ একর জমিতে এই ফলের আবাদ করেছেন তিনি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ মেট্রিক টন। টক বরইয়ের চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও ভাল পাওয়া যায়।

চাষি সিদ্দিক হোসেন জানান , ‘প্রায় ২০ বছর আগে সংসারের সুখের আশায় বিদেশ যেতে চাইলে আদম বেপারী তার সাত-আট লাখ টাকা মেরে দেন। জমিজমা বিক্রি, ধারদেনা করে সেসব টাকা পরিশোধ করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। ঋণের বোঝায় জর্জরিত জীবনে হতাশাই ছিল তার সঙ্গী।

এ অবস্থায় তিনি নার্সারীর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন নার্সারীর ব্যবসা। এরপর বিগত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তিনি দেশীয় আগাম জাতের টক বরই চাষ শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৫ একর জমি লিজ নিয়ে বরই আবাদ করেছেন।

দেশীয় আগাম জাতের টক বরই চাষ নিয়ে তিনি রীতি মতো গবেষণাও করেছেন। নিজেই এ জাতের বরই কলম দিয়ে চারা উৎপাদন করে সেই চারাই লিজ নেওয়া জমিতে বপন করে থাকেন। এভাবেই এ বছর পর্যন্ত তার ২৫ একর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এবারবাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। আমি ঢাকায় বিভিন্ন বাজারে টক বরই বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন প্রায় ২০ মণ বরই বিক্রি হয়। বাগানে প্রতিদিন বাগানে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত আমি ১৫ লাখ টাকার মতো বরই বিক্রি হয়েছে। আরো প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো বরই বিক্রি হবে। বরইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ফল চাষ করার জন্য পরিকল্পনা করছি।

স্থানীয় এলাকাবাসী তাকে একজন কৃষি উদ্যোক্তা বলে থাকেন। ২০০৯ তিনি পরিবেশের উপর জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকও পেয়েছেন জানালেন সিদ্দিক হোসেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, উপজেলায় কৃষকরা প্রথমে নিজেরাই টক বরই চাষ শুরু করেন। অন্যন্য বরই-এর চেয়ে টক বরই দুই মাস আগে ফলন আসে। এর বাজার মূল্যও অনেক বেশি পাওয়া যায়। প্রাইকারী প্রতিকেজি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজার মূল্য বেশি পাওয়ার কারণে আমরা কৃষকদেরকে টক বরই চাষে উদ্বুদ্ধ ও পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, সিদ্দিক হোসেন একজন সফল বরই চাষি। তার সাফল্য দেখে সখীপুরের অনেকেই ব্যক্তি বরই চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সফলও হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে টক বরই-এর ফুল আসে। আর নভেম্বরের শেষের দিকে এর ফলন পাওয়া যায় যায়।