ট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এবার অসময়ে বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে শিমক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে অন্য বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ায় হতাশ উপজেলার শিম চাষীরা। ঠিকমতো ফলন না হওয়ায় খরচও উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের মধ্যে শিম চাষের জন্য সীতাকুন্ড উপজেলার পরেই মিরসরাইয়ের অবস্থান। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হারে শিম চাষ হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে এখানে পাহাড়ের চূড়া থেকে সমতল পর্যন্ত যেদিকে চোখ যায় শুধু শিম আর শিম চোখে পড়ে। দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে মিরসরাই শিমরাজ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে উৎপাদিত শিমের স্বাদও ভিন্ন। শিম কিনতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। তাদের হাত ধরে এখানকার শিম চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মিরসরাইয়ে এবার ৬২০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করেছেন প্রায় আড়াই হাজার কৃষক। এখানে নানান প্রজাতির শিমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাটা, পুঁটি, লইট্টা, কার্ত্তিকোডা ও চুরি শিম।
উপজেলার অন্যতম বেশি শিম চাষ হয় খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে। ওয়াহেদপুর এলাকায় ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার শিম চাষে কোনো কোনো এলাকার কৃষক লাভবান আবার কোথাও কোথাও কৃষক ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছেন। এ লোকসানের মূল কারণ ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টি।

মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে দেখা যায়, এখানে হঠাৎ করে শিমগুলোতে অসংখ্য ছিদ্র ও পাতা শুকিয়ে গাছ মরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
ওই এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার ৩০ শতক জমিতে কার্ত্তিকোডা, লইট্টা জাতের শিম চাষ করেছি। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ বপণ, সার-কীটনাশক, কঞ্চি, শ্রমিক-মজুরিসহ চাষাবাদে খরচ হয়েছে ২০/৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু কুয়াশা ও মাঝের বৃষ্টির কারণে শিম ও গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ফলন হলেও বেশির ভাগই ঝরে যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, গত এক মাসে তার জমি থেকে মাত্র ৮ হাজার টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনে হয়ত আরো ১০ হাজার টাকার মতো শিম বিক্রি হলেও মূল খরচ উঠবে না। অথচ এই জমি থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হওয়ার কথা।

বড়দারোগাহাটে শিম বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় কৃষক নুরুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, এবার ৪৫ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। এখন মাত্র দুই মন শিম নিয়ে বাজারে যাচ্ছি। ঠিকমতো ফলন হলে এসময় ৪/৫ মন শিম নেয়ার কথা। অন্য বছরের তুলনায় এবছর দামও ভালো। কিন্তু ফলন কম হওয়ায় খরচ তুলতেও কষ্ট হবে।