ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর যেকারো নিজের কিংবা স্বজনদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। কারণ কখনো কখনো একদম শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে এই মারণব্যাধি। ফলে পর্যাপ্ত চিকিত্সার সুযোগ আর থাকে না। তবে ক্যান্সার যদি প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ে তবে চিকিত্সার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন—প্রাথমিক অবস্থায় নয়, অনেক আগেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পূর্বাভাস পাওয়া যাবে কোনো ব্যক্তির ক্যান্সার ‘হবে’ কি না। তখন তিনি চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক চিকিত্সা নিতে পারবেন। বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষার নাম দিয়েছেন ‘লিকুইড বায়োপসি’। গবেষণাগারে তারা ১০ ধরনের ক্যান্সার নিখুঁতভাবে পূর্বাভাস দিতে পেরেছেন এই পরীক্ষার মাধ্যমে। গবেষক দলের নেতৃত্বে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডের টসিগ ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এরিক ক্লেইন। সম্প্রতি শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ক্যান্সার বিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে তারা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে এই পরীক্ষা প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। তবে তারা আশা করছেন শিগগিরই একটা ভালো খবর দিতে পারবেন যাতে ক্যান্সার শনাক্তের জন্য জটিল স্তরে পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা না করতে হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা মোট ১৬২৭ জন ব্যক্তির উপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৪৯ জনের ক্যান্সার ছিল না। বাকিদের বিভিন্ন স্তরের অ-শনাক্ত ক্যান্সার ছিল। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সঠিক ফলাফল দিয়েছে তাদের এই গবেষণা। তারা বলেছেন, রোগীর উপর তিন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয়, ফুসফুসসহ কিছু ‘আনকমন’ ক্যান্সারও সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন তারা। তাদের গবেষণাকালে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার বেশি ধরা পড়েছে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ৮০ শতাংশ সঠিকতার মানদণ্ড ঠিক রেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

গবেষণা প্রবন্ধে তারা বলেছেন, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার এমন এক রোগ যেটি সাধারণত একদম ‘অ্যাডভান্সড’ স্তরে গিয়ে ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসা ভীষণ কঠিন কিংবা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গবেষকদের মতে, তাদের এই পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আগেই যে কেউ সতর্ক হয়ে যেতে পারবেন। তবে ঠিক কতদিন পর এই পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে সে ব্যাপারে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।-সিএনএন।