আগামী ২০শে নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বহুল প্রত্যাশিত এ সম্মেলন ঘিরে দলের অনেক অখ্যাত নেতাকর্মীর লাগানো বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। বাদ পড়েনি জেলার অনেক ধান খেতের বৈদ্যুতিক পিলারও। যেন অখ্যাত নেতাকর্মী নিজেকে বিলবোর্ডের মাধ্যমে সবারই মাঝে পরিচিত করে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টার মোক্ষম সময় এটি। নোয়াখালী শহিদ ভুলু স্টেডিয়ামে আসছে সম্মেলন ঘিরে জেলা আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা, সংশয় ও সন্দেহ। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচনে কাউন্সিলরদের সক্রিয় দেখা না গেলেও ব্যক্তি আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র ও যুবলীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা ব্যক্তি পক্ষে একট্টাভাব নিয়ে বিলবোর্ডে বিলবোর্ডে সরবতা দেখাচ্ছেন মাঠে।
বিলবোর্ডের আড়ালে পুরো শহরের প্রায় স্থান ও দোকান-পাট ঘিরে ফেলেছেন তারা। আর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, বিলবোর্ডধারী নেতা, কর্মীদের অধিকাংশই ছাত্র কিংবা যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে না থাকার পরেও ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের সান্নিধ্য ও সুবিধা ভোগের লালসায় বিলবোর্ড দিতে ওঠে পড়ে লেগেছেন। আর এসব বিলবোর্ডে পুরো শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকান-পাট ঢাকা পড়েছে। ম্লান হয়ে গেছে দোকান পাটের নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য্য। ব্যবসায়িকভাবে সীমাহীন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এসব ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, তার দোকানের সামনে বিশাল এক বিলবোর্ডধারীকে বাধা দিলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয় তাকে। তিনি জানান, অনেক কথা যা কাউকে অভিযোগ দূরের কথা, বলাও চলে না। অথচ, এসব বিলবোর্ডধারী ব্যক্তিগত ২/৪ জন সমর্থকও নেই বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের এক কর্মী বলেন, আমাদের বিলবোর্ড হাতেগোনা ৫/৭টি। তাও প্রধান সড়কের বাইরে। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দলের জেলার সাবেক সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কেউ প্রতিযোগিতায় আসছেন না- এমন ধারণা থেকেই তাঁদের সমর্থিত নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস দেখা দিয়েছিল। এরপর নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পরই পাল্টে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেন বর্তমান শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। বলেন, বিগত ১৫টি বছর জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের বিকাশে চরম বাধা হয়েছিলেন তারা। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ফেসবুকে নিজের পদবীর পরিচয় প্রকাশে ক্ষোভ জাহির করে পোস্ট দেয়ার পরই তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় নানা জল্পনা ও কল্পনা। কেউ বলছেন, তিনি হয়তো সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে গিয়ে সভাপতির জন্যে মাঠ চষবেন। তবে আবারো ফেসবুকে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রচার করায় বলা চলে তিনি এ পদেই প্রতিযোগিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে নোয়াখালীর পৌর মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের কর্মী ও সমর্থকেরা ঘরে বসে নেই। তারাও সোহেলের পক্ষে নিজ নিজ আঙ্গিনায় সজাগ প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন। তারাও সোহেলের পক্ষে তুলে ধরেছেন অতীতের রাজনৈতিক ত্যাগ ও তিতিক্ষা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের পক্ষে মাইজদী শহরে মিছিল সমাবেশ হয়। জেলা যুবলীগ নেতা নাজমুল আলম মঞ্জু বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক সংগঠনের ভিতে ফিরে নিতে একজন সাংগঠনিক নেতৃত্বধারী নেতা হিসেবে সোহেলই সাধারণ সম্পাদক পদের যোগ্যতা রাখেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এডভোকেট দেলওয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ ব্যক্তিশাসনে পরিণত হয়েছে। এখানে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বভাব-চরিত্রের দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশই সংগঠনিক কর্মকান্ডকে দুর্বল ও ম্লান করে দিয়েছে। এসব নিয়ে নোয়াখালীর পৌর মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। উৎস -মানব জমিন