দিন ভর উত্তেজনা ছড়িয়েছে, হয়েছে নানা নাটক। ছিল নানা গুঞ্জনও! অবশেষে মধ্য রাতে দুই পক্ষের আলোচনা শেষে অবসান হয়েছে অচলাবস্থার। মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে আলোচনার পর গত সোমবার ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ফলে আগামীকাল থেকে ভারত সফরের অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছেন তাঁরা। জাতীয় ক্রিকেট লীগের তৃতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হবে শনিবার থেকে।
ক্রিকেটারদের দাবিদাওয়া নিয়ে গত দুদিন ধরেই চলছিল তোলপাড়। মঙ্গলবার বোর্ড সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেয়ার পর উত্তাপ আরও বেড়ে যায়। গতকাল সকাল থেকেই আসে নমনীয় সুর। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে দাবি মেনে নেয়ারও ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
তবে দিনভর ক্রিকেটাররা ছিলেন অনড়। বিসিবির পক্ষ থেকে ক্রিকেটারদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রন জানিয়ে অপেক্ষা করা হয়। ক্রিকেটাররা সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই আহবানে সাড়া না দিয়ে পালটা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন গুলশানের একটি হোটেলে। সেই সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের পক্ষ হয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। পুরনো এগারোটি দাবির সঙ্গে যোগ হয় আরও দুই দাবি।
তবে সেই সংবাদ সম্মেলনের পরই বিসিবির আহবানে সাড়া দিয়ে মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। রাত সাড়ে নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত চলে আলোচনা। এরপর দুই পক্ষই এক হয়ে আসেন গণমাধ্যমের সামনে। বোর্ড প্রধান বলেন, ‘ওদের এগারো দাবির মধ্যে প্রথমটি আগেই বলেছি কোয়াব আমাদের এখতিয়ারে নেই। আর দুটোর বেশি ফ্রেঞ্চাইজি লীগ খেলার অনুমতি নিয়ে বলেছি এটা কেইস টু কেইস দেখব। বাকি নয়টি দাবিই মেনে নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু দাবি তো আমরা কালই মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি।’ বাকি যেসব দাবি ছিল তাও মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘তাদের পারিশ্রমিক, ছিল এলাউন্স ছিল, ফ্যাসিলিটিস ছিল। আমরা বলেছি যত দ্রুত সম্ভব আমরা এইগুলো বাস্তবায়ন করব। দুই-তিনদিনের মধ্যে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাব। তবে অবকাঠামোর কথা যেটা বলেছে সেটা তো করতে সময় লাগবে। আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগে এক জায়গায় করব, তারপর আরেক জায়গায় এভাবে। তবে এখন আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি একসঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সব জায়গায় শুরু করব।’
ক্রিকেটারদের হয়ে দাবিপূরণের আশ্বাসে সন্তুষ্টি জানান বাংলাদেশের টেস্ট ও টিটোয়েন্টি অধিনায়ক, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ, আমাদের তারা আশ্বাস দিচ্ছেন সব দাবি দ্রুত তারা পূরণ করবেন। তার ভিত্তিয়ে আমরা খেলায় ফিরছি।’ তবে নতুন দুটির দাবির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান বিসিবি সভাপতি। নতুন দুটি দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল বিসিবির আয়ে ক্রিকেটারদের ভাগ চাওয়া। কিন্তু হঠাৎ করেই দাবি গুলো এসেছে বলে বিসিবি তা নিয়ে কোনো আলোচনাই করেনি বলে জানান তিনি। সাকিব বলেন, ‘আমরা দুটি নতুন দাবি করেছিলাম তা বিসিবি জানতো না। এখন জেনেছে। যে কারণে তারা আলোচনা করতে পারেনি। আর কোয়াবের নির্বাচনটা আসলে বিসিবির বিষয় না আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কোয়াব জানিয়েছে দ্রুত নির্বাচন দিবে। আমাদের প্রতিনিধিরা যেন সেখানে থাকে।’ অন্যদিকে আলোচান ও দাবি পুরণ নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘সন্তুষ্ট কিনা সেটি সব ক্রিকেটারই বলতে পারবে। আর যেহেতু আমােেদর বেশির ভাগ দাবি-দাওয়াইতো মেনেছে। তবে দেখতে হবে বাস্তবে তা কার্যকর হয় কিনা। তালেই আমরা খুশি হবো।’
সকালেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছিলেন তারা ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বাক্ষাত শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও জানান একই কথা। তিনি মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিরে আসেন গণভবন থেকে দুপুর ৩ টায়। তার পর থেকে শুরু হয় সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের জন্য অপেক্ষা।
ক্রিকেটারদের মধ্যে তবুও চাপা ক্ষোভ!
এর আগে বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন মঙ্গলবার। সেখানে সাকিবÑতামিমদের ধর্মঘটকে ক্রিকেট ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন বিসিবি প্রধান। তবে গতকাল এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিরা। তবে রাতে সভাশেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় কোন কোন ক্রিকেটারের মধ্যে অসস্তোষ ও চাপা ক্ষোভ দেখা যায়।