জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির বায়ো’তে লেখা আছে: ‘৭৫ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও ওই বায়ো’তে আরও উল্লেখ আছে: ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’। তার কভার ফটোতে বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরারের একটি ছবি দিয়ে লেখা আছে ‘ভারত বিরোধী আন্দোলনের স্বাধীন বাংলার প্রথম শহীদ আবরার।’

তবে শ্যামলের দাবি, তার কোনো ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি নেই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। শ্যামল এ বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে এ কথা তার ফেসবুক বায়োতে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন শ্যামল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমার ব্যক্তিগত কোনো ফেসবুক আইডি নেই। নেতা হওয়ার পরপরই আমার ফেসবুক একাউন্টটি হ্যাক হয়ে যায়। আমার নামে ১০-১২টি ফেক আইডি খোলা হয়েছে।

তিনি বলেন: এ বিষয়ে আমি উকিলের মাধ্যমে গত ৬ অক্টোবর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। জিডি নাম্বার ২৯০।

তিনি বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য একপক্ষ এই প্রচারণা করছে। আমাকে বিপদে ফেলতে এবং সংগঠনকে বিতর্কিত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি মহল এটি করেছে।

ছাত্রদলের এই শীর্ষ নেতা বলেন: আমরা কোনো সহিংসতা চাই না। রাজনীতি করার জন্য আমরা সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।

এই লেখা নিয়ে শনিবার দুপুরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। তাদের দাবি: ৭৫ এর প্রেক্ষাপটের পুনরাবৃত্তি করার লক্ষ্যেই তারা এগোচ্ছে।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন।

জানতে চাইলে বাধন বলেন: তিনি তার ফেসবুক বায়োতে ৭৫’এর প্রেক্ষাপটকে উল্লেখ করেছেন। ৭৫ এ জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ছাত্রদলের সেক্রেটারি নতুনভাবে আবার সেটিকে সামনে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি তার কাছে এটির জবাব চাই। আর কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না। আমরা মধুর ক্যান্টিনে এ বিষয়ে তার কাছে জবাব চাইবো। সে যদি তার অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারে তাহলে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তিনি নিজেই দায়ী থাকবেন।

ইকবাল হোসেন শ্যামল দাবি করেছেন তার ব্যক্তিগত কোনো ফেসবুক আইডি নেই, বিষয়টি জানালে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন: আমরা তার অনেক আইডিই দেখেছি। অন্য কোনো আইডিতে এই আইডির মত এত ফলোয়ার নেই। এই আইডিতে সাড়ে বারো হাজারের বেশি ফলোয়ার। আপাতদৃষ্টিতে এটি তার প্রকৃত আইডি বলেই মনে হচ্ছে।

এদিকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক বায়োর পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান হাজী মহাম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী৷ জানতে চাইলে তিনি বলেন: ১৯৭৫ সালে মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালে এসে তারই গঠিত ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতা সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান। তাদের টার্গেট এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন: ছাত্রলীগের কর্মীরা থাকতে তাদের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদলের সেক্রেটারি এই কথার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানই নড়বড়ে করলেন। তিনি যদি তার ফেসবুক বায়ো’তে লেখা বক্তব্যের সুষ্ঠু জবাব দিতে না পারেন তাহলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।