অর্থনীতি | তারিখঃ অক্টোবর ১৬, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 843 বার
বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৯ সালে বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে, এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, রফতানি, রেমিট্যান্স এবং উৎপাদন খাতের সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে এই উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার আইএমএফ’র সদর দপ্তরে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপি চলতি অর্থ বছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে। এর আগে এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক এর প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
আইএমএফের এ পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের স¤প্রতি প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কোনো দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা জিডিপির হিসাব করে। বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের গতিপ্রকৃতি দেখে পূর্বাভাস দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ নেমে আসতে পারে। চলতি বছরে বাংলাদেশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে কেবল রুয়ান্ডা এবং ডোমিনিকা, ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। দক্ষিণ সুদানের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
আইএমএফ অনুমান করেছে, এই বছর বাংলাদেশ কম মূল্যস্ফীতি দেখবে। গত বছরের ৫ দশমিক ৬ শতাংশের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি এ বছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।
বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি গত দু’বছর ধরে যে বাড়ছে সেটাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এই নেতিবাচক ভারসাম্য ২০১৭ সালে ছিল জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে নেতিবাচক ভারসাম্য কিছুটা কমে এসে জিডিপির ২ শতাংশে দাঁড়াবে।
এদিকে, প্রতিবেশী ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে, এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। চলতি বছরের এপ্রিলে আইএমএফ যখন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তখন দেশটির প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অর্থনীতির মধ্যে ভুটান এই বছর প্রবৃদ্ধি করবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, মালদ্বীপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপাল ৭ দশমিক ১ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং পাকিস্তান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে আইএমএফের ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, যদিও এপ্রিলে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৩ দশিমিক ৩ শতাংশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির কথা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বাধা, বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার উত্থান, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া ও অনেক উন্নত দেশে পপুলেশন ডেমোগ্রাফিকে বার্ধক্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক আস্থার ঘাটতি, জাপানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জার্মানিতে পরিবেশ ইস্যুতে গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
এরপরও বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, নেপাল, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ডোমিনিকা এবং দক্ষিণ সুদানের অর্থনীতিগুলি চলতি বছরে ৭ শতাংশ বা তারও বেশি প্রবৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বাহাদুরি করার কিছু নেই বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর মইনুল ইসলাম। প্রফেসর মইনুল বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্তে¡ও দেশে বৈষম্য বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন একটি ‘উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এর সদস্য ১৮৮টি দেশের অর্থনীতি কেমন যাবে, তা নিয়ে প্রক্ষেপণ রয়েছে। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভাকে সামনে রেখে আইএমএফ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের ওপর সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থার মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী উৎপাদন খাতে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। উৎস – ইনিকিলাব
Leave a Reply