নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পাঠানটুলী ওয়ার্ড যুবলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট খোরশেদ আলম নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ মিডিয়া উইং মাশকুর রহমান। এসময় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। নিহত খোরশেদের বিরুদ্ধে পুলিশ সোর্স মান্নান হত্যা মামলাসহ ৮টি মামলার তথ্য প্রাথমিকভাবে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী।
র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, খোরশেদ আগ্রাবাদ এলাকায় যুবলীগ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও বারবার পুলিশের হাত থেকে পালিয়েছেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে র‌্যাবের সাথে তার গুলিবিনিময় হয়। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে খোরশেদের নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার অনুসারীরা আগ্রাবাদ এলাকায় তিনটি রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানোর আওয়াজ শোনা যায়। পরে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তার অনুসারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমনকি তাদেরকে গাড়ির পেছন পেছন দৌঁড়তে দেখা যায়। তবে র‌্যাব-পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত খোরশেদ পাঠানটুলী ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এক সময় ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল কাদেরের ঘনিষ্ট হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। বছর দুয়েক আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এরপর থেকে খোরশেদ আলাদা বলয় তৈরি করেন। কাদেরকে ঠেকাতে কমার্স কলেজ কেন্দ্রিক টিপুর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ গড়ে ওঠে। এ গ্রুপটি কাদেরের অনুসারীদের সাথে টিকতে না পেরে খোরশেদের শরণাপন্ন হয়। পরে খোরশেদ-টিপু জোটবদ্ধ হয়ে আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাদেরকে ঠেকাতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। একই সাথে এলাকায় টেন্ডার, চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দল ভারি করতে থাকেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ আগস্ট নগরীর আগ্রাবাদের বিভিন্ন শিপিং হাউজ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলে তিনি উল্টো হামলা চালিয়ে পালিয়ে যান। এর আগেও তিনি দুবার পালিয়েছিলেন। তার ঘনিষ্ট লোকজন জানান, সেদিন তিনি গ্রেপ্তার হলে তাকে হয়তো এই পরিণতি বরণ করতে হত না। তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যে, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। এছাড়া কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবেও তার কুখ্যাতি ছিল।
সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী জানান, খোরশেদ পেশাদার সন্ত্রাসী। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় একটি, কোতোয়ালী থানায় একটি অস্ত্র মামলা, ডবলমুরিং থানায় মাদক, অস্ত্র ও হত্যা সংক্রান্ত তিনটি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। পুলিশের তালিকায় তার নামের পাশে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র বিক্রেতা উল্লেখ রয়েছে। তিনি মোগলটুলী জমিরউদ্দিন লেইনের মৃত শফিক আহমেদের পুত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩০ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে আরেক পেশাদার সন্ত্রাসী গোলাম সরওয়ার প্রকাশ হামকা মিলনসহ ১০-১৫ জন সহযোগী নিয়ে মনির হোসেন মান্নান নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেন। মান্নান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে খোরশেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মান্নানকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহটি সড়কের পাশে ফেলে যায়। খোরশেদকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছে হত্যায় ব্যবহৃত চাইনিজ কুড়াল পাওয়া যায়। এ হত্যা মামলায় বেশ কিছুদিন কারাভোগও করেছেন খোরশেদ। এর আগেও একটি অস্ত্র মামলায় জেল খেটেছিলেন তিনি।