অনেক দিন ধরেই দেশের কৃষকরা ঝড়বৃষ্টিতে টিকে থাকতে সক্ষম ও উচ্চফলনশীল একটি ধানের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আমন মৌসুমে ফলন দেবে হেক্টরে ৭ টন এবং ঝড়বৃষ্টিতেও গাছের কিছু হবে না- এমন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন। ধানটির নাম দেওয়া হয়েছে বিনা-২২। এর মধ্য দিয়ে আমন মৌসুমে দেশের কৃষিতে যুক্ত হলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটি আমন ধানের জাত। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে বিনা-২২ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ধানের এ জাতটিতে গামারশ্মি প্রয়োগ করে মিউট্যান্ট লাইনের মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া উপযোগী করা হয়েছে। চলতি বছরে শেষ হয় বিনা-২২ এর মাঠ পর্যায়ের গবেষণা মূল্যায়ন। কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের অনুমোদনের জন্য এ ধান পাঠানো হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডে। গত ১৯ জুন জাতীয় বীজ বোর্ডের ৯৯তম সভায় ধানটি আমন মৌসুমে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বায়োটেকনোলজিস্ট ও উদ্ভিদ প্রজনন বিজ্ঞানী ড. ইমতিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বিনা ধান-২২ উদ্ভাবনে সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেন বিজ্ঞানী ড. শহীদুল ইসলাম, ড. আশরাফুল ইসলাম, ড. হারুন-অর রশিদ ও ড. মনিরুল ইসলাম।

ধানের নতুন এ জাতটি সম্পর্কে ড. ইমতিয়াজ বলেন, এটি উচ্চ ফলনশীল, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ও স্বল্পমেয়াদি। এর গাছ শক্ত বলে হেলে পড়ে না। তাই ঝড়, খরা ও অতিবৃষ্টিতে ধান গাছের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এ জাতের ডিগপাতা গাঢ় সবুজ, খাড়া এবং কিছুটা মোটা। ফলে ধান পুষ্ট হয়। আমন মৌসুমে এ ধানের আবাদ দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী এ ধান আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি সাত টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে।

তিনি জানান, অন্যান্য জাতের আমন ধান উৎপাদনে ১৩০ থেকে ১৪০ দিন সময় লাগে। তবে বিনা-২২ ১১০ থেকে ১১৫ দিনেই ঘরে তোলা যায়। ফলে একই জমিতে কৃষকরা সহজেই গম, সরিষা, আলু ও অন্যান্য রবিশস্য চাষাবাদ করতে পারবেন। এ ছাড়া এ ধানের চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় বিদেশেও রফতানি করা যাবে।

কৃষিতে এ ধান কেমন অবদান রাখবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইমতিয়াজ বলেন, আমন মৌসুমে কৃষি জমির এলাকা বেশি হলেও ফলন কম। কারণ হলো ভালো ধানের জাতের অভাব। এক্ষেত্রে বিনা-২২ আবাদ শুরু হলে উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও দৃঢ় করবে স্বপ্নের এ ধান।

জাতীয় বীজ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মাঠ গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আমন মৌসুমে বিনা-২২ এর ফলন অন্য যে কোনো উচ্চফলনশীল ধানের চেয়ে বেশি। অন্য ধানের ফলন যেখানে প্রতি হেক্টরে গড়ে চার থেকে সাড়ে চার টন, সেখানে বিনা-২২ সাড়ে ছয় টনের বেশি উৎপাদন হয়।

কৃষিবিজ্ঞানী ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের মোট খাদ্য চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগ মেটায় বোরো। ৩০ শতাংশ আসে আমন এবং ১০ শতাংশ আসে আউশ থেকে। অথচ এক সময় চালের মূল অংশই আসত আমন থেকে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, স্বল্প খরচে বৃষ্টির পানিতেই আমন চাষ সম্ভব। তবে বন্যা ও খরাসহিষ্ণু আমন ধানের জাতের অভাবে কৃষকরা আমন চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর আমনের উৎপাদন কমছে। বাড়ছে বোরোর উৎপাদন। এ নতুন জাতটি আমন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করবে। সূত্র-সমকাল