অর্থনীতি | তারিখঃ অক্টোবর ৭, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1026 বার
বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তবে দেশের সব অঞ্চলে দারিদ্র্য কমার হার যেমন সমান নয়, তেমনি কমার গতিও শ্লথ।
বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে অর্থনীতির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমের বিভাগগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ঐতিহাসিক পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে। এই সময়ে পশ্চিমের রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য বেড়েছে, রাজশাহী ও খুলনায় পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই। তবে চট্টগ্রামে দারিদ্র কমেছে পরিমিতভাবে, বরিশাল, ঢাকা ও সিলেটে কমেছে দ্রুতগতিতে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মারিয়া ইউজেনিয়া জেননি প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১০-১৬ সময়কালে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে শ্রমিকের আয় বৃদ্ধি এই উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০-১৬ সময়ে যে হারে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে তা ২০০৫-১০ সময়ের তুলনায় কম। ২০০৫-২০১০ সময়ে প্রতিবছর এক দশমিক সাত শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমেছে, আর ২০১০-২০১৬ সময়ে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে বছরে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে।
দারিদ্র্যহার কমার চিত্র তুলে ধরে জেননি বলেন, ২০১০ সালে বরিশালে দারিদ্র্য হার ছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে। একইভাবে চট্টগ্রামের দারিদ্র্য হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে। আর সিলেটের দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে নেমে আসে ১৬ দশমিক ২ শতাংশে। অন্যদিকে ২০১০ সালে রংপুরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, আর ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০-২০১৬ সময়ে দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই হয়েছে গ্রামে। শহরে দারিদ্র্য কমেছে সীমিত হারে। অতিদরিদ্র্য জনগোষ্ঠির মধ্যে শহরের লোকের অবস্থান প্রায় একই রয়ে গেছে। এ কারণে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি শ্লথ হয়েছে। আর গ্রামাঞ্চলেও দারিদ্র্য কমাতে শিল্প খাত বেশি অবদান রেখেছে। আলাচ্য সময়কালে কৃষি প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি খাত আগের চেয়ে কম অবদান রেখেছে। আর শহরাঞ্চলে উৎপাদন খাত (বিশেষ করে পোশাক খাত) দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মনে করছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার সঠিক পথেই রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে রীতিমতো যুদ্ধ চালাচ্ছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের হতদরিদ্রের সংখ্যা ১০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। কিন্তু দারিদ্র্য সীমা এখনও ১৯-২০ শতাংশে ঘোরাঘুরি করছে। তবে এ হার নামিয়ে আনতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরপাত্তা বেষ্টনির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র্যপ্রবণ নির্দিষ্ট এলাকা ও দরিদ্র গ্রুপকে টার্গেট করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা দৃঢ় আশাবাদী।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সিয়া টেম্বন বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। কিন্তু এখনও প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।
দারিদ্র্য কমাতে দারিদ্র্যের নতুন ক্ষেত্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শহর এলাকায় দারিদ্র্য বিমোচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্ধেকই শহরে বাস করবে বলে প্রক্ষেপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম।
Leave a Reply