জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 277 বার
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাই চেষ্টা মামলায় কমান্ডো অপারেশনে নিহত পলাশ আহমেদের সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার সিমলা অবশেষে তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর মুম্বাই থেকে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে এসে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বিষযটি নিশ্চিত করে পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিহত পলাশের সাবেক স্ত্রী সিমলার নাম আলোচনায় ছিল। ঘটনার সময় তিনি মুম্বাই থাকাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তিনি বারবার শ্যুটিংয়ের সিডিউলের কথা বলে সময় নিয়েছেন। অবশেষে আজকে (১২ সেপ্টেম্বর) আমার অফিসে এসেছেন। তাকে তদন্তের স্বার্থে যা যা প্রশ্ন করার তা জিজ্ঞেস করেছি। উনিও পলাশের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই বলেছেন। তাকে তদন্তের স্বার্থে আবার ডাকা হলে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
আলোচিত এ মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিত্রনায়িকা সিমলার কথা বারবার উঠে আসলেও তাকে এতদিন পাচ্ছিলেন না তদন্ত কর্মকর্তা। তবে বৃহস্পতিবার আসলেও দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে নতুন কোনও তথ্য দিতে পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। পলাশের প্রতারণা মিথ্যাচারের কারণেই মূলত বিয়ের পর ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন সিমলা। ডিভোর্সের পর থেকে পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় বিমান ছিনতাই সম্পর্কে কোনও তথ্য জানেন না বলেও দাবি সিমলার। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ম্যাডাম ফুলি খ্যাত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এ নায়িকা।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয়। পলাশ আগের বিয়ের খবর গোপন করায় ওই বছরের ৬ নভেম্বর সিমলা পলাশকে ডিভোর্স দেন। চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরেই ‘হতাশা’ থেকে বিমান ‘ছিনতাইয়ের’ চেষ্টা করেছিলেন পলাশ আহমেদ। ঘটনার দিন উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’ চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পর পলাশ সিমলার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে ওই সময় কমান্ডো অভিযানে থাকা বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। পরে ৮ মিনিটের এক কমান্ডো অভিযানে পলাশ আহমেদ নিহত হন। ওই সময় বিমান থেকে একটি খেলনা পিস্তল ও কিছু বিস্ফোরকসদৃশ বস্তু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বিমান ছিনতাই মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমানের ৭ জন ক্রু, এছাড়া ওই বিমানের ইঞ্জিনিয়ার, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার, স্টেশন কর্মকর্তা, বিমান বন্দরের কন্ট্রোল রুমের চার কর্মকর্তা ছাড়াও রয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমান বিজি-১৪৭ উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পর পলাশ আহমেদ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। ৫টা ৪১ মিনিটে বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্লেনের ‘ইমারজেন্সি ডোর’ দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের দ্রুত বের করে আনা হয়। পরে যৌথবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিমের অভিযানে মারা যান পলাশ আহমেদ।
এ ঘটনায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এ্যাভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে পলাশ আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়াকে। তবে কেন এই ছিনতাই চেষ্টা করা হয়েছে সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
Leave a Reply