কৃষি কথা | তারিখঃ আগস্ট ৩০, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 872 বার
বরিশালের বানারীপাড়ায় মাত্র ২৫ হাজার টাকা খরচে পতিত জমিতে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে ট্যাঙ্কির (খাঁচা) মধ্যে মাছ চাষ শুরু করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সফল ও মডেল কৃষি উদ্যোক্তা সুলতান হোসেন। উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় কম খরচে অন্যের পতিত জমি বার্ষিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে দুটি ট্যাঙ্কি তৈরি করে স্থানীয় জাতের শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা, সিলন ও ট্যাংরা জাতের মাছ চাষ করে যুব উদ্যোক্তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি। সুলতান হোসেনের বায়োফ্লোক পদ্ধতির মাছ চাষ দেখে স্থানীয় যুবকরা বাড়ির পতিত জায়গায় মাছ চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সুলতানের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে যাচ্ছেন অনেকে। কম খরচে দেশীয় জাতের মাছ চাষের পরামর্শ দিয়ে স্থানীয় বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি।
বয়োফ্লোক পদ্ধতিতে কী তা জানতে চাওয়া হয় সুলতানের কাছে। তিনি বলেন, পতিত কিংবা খোলা জায়গায় ৩৫ ফুট লম্বা রড ৬-৭ ইঞ্চি পরপর ঝালাই করে সাড়ে তিন ফুট উঁচু এবং ১০ ফুট গোলাকৃতির একটি খাঁচা তৈরি করতে হয়। পরে ওই খাঁচা একটি ওয়াটারপ্রুফ ত্রিপল দিয়ে ভালো করে আটকাতে হয়, যাতে কোনোভাবে খাঁচার পানি বাইরে বের হতে না পারে। খাঁচার নিচের দিকে ছিদ্র করে পানি প্রবেশ ও বের করার জন্য লোহা বা প্লাস্টিকের একটি পাইপ এবং সুইচ সংযুক্ত করতে হয়। পরে মোটর দিয়ে খাঁচায় প্রয়োজনীয় পানি ও অক্সিজেনসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়ার পর সেখানে মাছ চাষ করতে হয়।
বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষের আগে প্রতিটি খাঁচায় চুন, লবণ, চিটাগুর ও প্রবাইটিক দিয়ে সাত দিন পর্যন্ত পানির কালচার (মিশ্রণ) করতে হবে। এরপর খাঁচায় স্থানীয় জাতের শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা, সিলন ও ট্যাংরা মাছ চাষ করা যাবে। প্রতিটি খাঁচার মধ্যে মাছের সাইজ অনুযায়ী পরিমিত খাবার দিতে হবে। প্রতি তিন-চার মাস পর একটি খাঁচায় ৭-৮ মণ মাছ উৎপাদন করা যাবে। স্থানীয় বাজারে যা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করা যাবে। স্থানীয় দড়িকর এলাকার বেকার যুবক মনির হোসেন বলেন, বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে সুলতান হোসেনের মাছের খামার দেখে তিনিসহ স্থানীয় অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার নামে নানা কাগজপত্র চেয়ে সময় ক্ষেপণ করে তাদের হয়রানি করায় উৎসাহে ভাটা পড়ছে। কৃষি বিভাগের একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল ও মডেল ফল চাষি সুলতান হোসেন জানান, কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণ ছাড়াই সম্প্রতি তিনি বানারীপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী কৃষ্ণপুর এলাকায় কম মূল্যে অন্যের জমি বার্ষিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে এসএস ফিশ ফার্ম ইন বরিশাল নামে পৃথক দুটি খাঁচা তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ চাষ শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে একটি খাঁচা তৈরি করতে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খাঁচা তৈরির পর মাছ চাষ করে পাঁচ-ছয় মাস পরপর সেগুলো বিক্রি করা যাবে। এই পদ্ধতিতে মাছের খাবারসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ, কৃষি কর্মকর্তা ওলিউল আলম ও মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসেনসহ একাধিক কর্মকর্তা কৃষ্ণপুরে সুলতান হোসেনের বায়োফ্লোক পদ্ধতির মাছের খামার পরিদর্শন করে এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়নি। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বায়োফ্লোক পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুরেও পরীক্ষামূলকভাবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ বলেন, প্রতিটি গ্রামের বেকার যুবকরা এভাবে সুলতান হোসেনের মতো নতুন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে স্বাবলম্বী হতে পারবে। পাশাপাশি দেশীয় জাতের মাছের উৎপাদনও বাড়বে। সূত্র-বিডি প্রতিদিন
Leave a Reply