জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি বিতর্কিত পোস্টার ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে। খোদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-নেত্রীরাই বলছেন, ‘শেখ হাসিনার ছাত্রলীগে জামায়াতি আঁচড়’ লাগছে। তথাকথিত সিন্ডিকেট মুক্ত করতে গিয়ে ‘নতুন সিন্ডিকেট’ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এনেছে শিবির, জামায়াতি পরিবারের সন্তান ও ছাত্রদলের নেতাদের। ফলে ধীরে ধীরেই বিতর্ক বাড়ছে।

ছাত্রলীগের বর্তমান দুই শীর্ষ নেতা কথায় কথায় ‘আপার ছাত্রলীগ’ বলে বুলি আউড়ালেও জামায়াত শিবির নিয়ে পরিবেষ্টিত। বেসামাল হয়ে পড়েছে তৃণমূল ছাত্রলীগ। ভেঙে পড়েছে চেন অব কমান্ড। তৃণমূলে কেউ শোনে না কারো কথা। সাবেক নেতারা বলছেন, বর্তমানে ছাত্রলীগের যে বেহাল অবস্থা তা অতীতে কখনোই হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে পবিত্র কোরান খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ছাত্রলীগ। অনুষ্ঠানের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের পাতা। কিন্তু রীতিমতো ছাত্রশবিরিরের মতো পোস্টার তৈরি, জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার না করা ও চিহ্নিত জামায়াতীদের অনুষ্ঠানে অতিথি করা নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সমালোচনার ঝড় বইছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তারা বলছেন, এতদিনে ছাত্রলীগের যে অনুপ্রবেশের কথা বলা হচ্ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্রলীগের পোস্টারে রীতিমতো ছাত্রশিবিরের ছোঁয়া লেগেছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশ্য রাতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ওই পোস্টার তাদের নয় বলে দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
ওই পোস্টারে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘জয় বাংলা’ না বলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়াকে বিএনপির দেয়া উপাধি ‘দেশনেত্রী’ বলে অভহিত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। ঢাবির মধুর ক্যান্টিন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু ভবনে ছেয়ে গেছে পোস্টারে। শীর্ষ নেতারা নিজেদের ফেসবুক পেজেও দিয়েছেন পোস্টারের ছবি। দেখা গেছে পোস্টারে কোথাও নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি। কোন ছবি ব্যবহার না করে পোস্টারের রং দেয়া হয়েছে ছাত্রশিবির ও খেলাফত মজলিশের মতো মৌলবাদী সংগঠনের করা পোস্টার বা ব্যানারের মতো।

লেখা আছে ‘পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিলে’ সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, প্রধান অতিথি মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। কোরআন তেলওয়াতে শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, সাইদুল ইসলাম আসাদ, তাওহীদ বিন আলী লাহোরী, সাইফুল ইসলাম আল হুসাইনী, তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান তুরকী ও তারেক জামিল।

হামদ-নাতে জাগ্রত কবি (?) মুহিব খান, আনিছ আনসারী, হাফেজ এমদাদুল ইসলাম, মামুন আনসারী, কাজি আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, এনামুল কবির, সফিউল্লাহ বেলালী, ইসহাক আলমগীর, হাসনাত রায়হান, ইশতিয়াক আহমাদ।

ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য তানভীর হাসান সৈকত তার ফেসবুক ওয়ালে হতাশ হয়ে লিখেছেন, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত, জয় মামা ও তার স্ত্রী নিয়ে কূটক্তিকারী এই জাগ্রত কবি মুহিব খান। যিনি জামায়াতের সকল প্রোগ্রামে গান পরিবেশন করতেন। তার বাবা আতাউর রহমান খান বিএনপির সাবেক এমপি। তিনি এই প্রোগ্রামের অতিথি! তাহলে এটা কি জামায়াতের প্রোগ্রাম? মুহিব খানের বাবা আতাউর রহমান খান ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি জয় লাভ করেন কিশোরগঞ্জ সদর থেকে, সদরের সকলেরই এটা জানা। এমন একজন বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানে কে বা কারা সরবরাহ করল?

ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রলীগে আপনাকে স্বাগতম।’ নীচে ছাত্রলীগের বির্তকিত পোস্টারটি শেয়ার দিয়েছেন তিনি।

সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মসূচির আয়োজন করবে। সেই কর্মসূচির পোস্টারে জাতির পিতাসহ শহীদদের কারও ছবি নেই। এটা ছাত্রলীগের কর্মসূচির সঙ্গে যায় না। মুহিব খান স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। সে জাতির পিতাকে স্বীকার করে না, জাতীয় সঙ্গীতকে মানে না।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ সাহা পার্থ লিখেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আয়োজনে কোরআন খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিল প্রোগ্রামে কাদেরকে অতিথি করেছেন, সবাই কি আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক নাকি জামায়াত-বিএনপির লোকজনও আছে? ‘কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল’-এর অনুষ্ঠান থেকে জামায়াতের এই কুলাঙ্গারকে বাদ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ভাই ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাইকে অনুরোধ করছি। ভুল হতেই পারে, শুদ্ধ করতে নিষেধ নেই বা ছিল না কখনই।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দফতর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন লিখেন, জাতির পিতারসহ ১৫ আগস্ট কোন শহীদের ছবি ছাড়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী পোস্টার।

ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত আর ৩০ লাখ শহীদকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা যে দেখায় সেই কুলাঙ্গার কি করে এদেশের মুক্ত আলো হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায়?

রাতে দায় এড়াতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর রানা হামিদ নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, সুবোধ বালকদের সুবিধাবাদী এই স্ট্যাটাস প্রসব করার অপেক্ষায় ছিলাম সারাদিন। আচ্ছা জামায়াত শিবির কি ক্যাম্পাসে এতই শক্তিশালী হয়ে উঠলো যে দিন দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এসে পোস্টার মেরে গেল? আর আমাদের সুবোধ বালকেরা কেউই টের পেল না। ছাত্রদলের সাথে সখ্যতা ছিল জানতাম, কিন্তু ছাত্রশিবিরের সাথেও যে পরকিয়া চলছে তো জানা ছিল না। জয় গুরুকূল। সূত্র-অনলাইন,বিডি প্রতিদিন