অর্থনীতি | তারিখঃ আগস্ট ১৮, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1158 বার
টিন (Taxpayers Identification Number or TIN) হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ১২ সংখ্যার একটি ইউনিক আইডি নম্বর যা প্রত্যেক করদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রদান করা হয়। প্রত্যেক করদাতা টিন নম্বরের বিপরীতে বছরের নির্ধারিত সময়ে সরকারকে কর প্রদান করে থাকে। নতুন অর্থবছরে ৩১ ধরনের কাজের জন্য বাধ্যতামূলক ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। নতুন বছরে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং, পরিবেশক এজেন্সি, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্টম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ ও সিকিউরিটি সার্ভিস। পাশাপাশি আমদানি, রফতানি, বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন লাগবে। টিআইএন ছাড়া এখন থেকে এসব ব্যবসা করা যাবে না।
মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা করেন পাড়া-মহল্লায় হাজার হাজার তরুণ। এটা কর্মসংস্থানের নতুন খাত হয়ে গেছে। ওইসব তরুণের অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা করেন। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এজেন্টশিপ নেন। এবার তাদের টিআইএন নিতে হবেই। টিআইএন ছাড়া এই ধরনের ব্যবসা করা যাবে না। আবার বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের পণ্য ও সেবা বেচাকেনার জন্য দেশজুড়ে পরিবেশক বা এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এই এজেন্ট ও পরিবেশকদেরও এখন টিআইএন নেয়া বাধ্যতামূলক। আবার একজন ব্যক্তি যদি কোন প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ সেবা, খাবার সরবরাহ, ইভেন্ট ম্যানেজ সেবা, জনবল সরবরাহ এবং নিরাপত্তা সেবা (সিকিউরিটি সার্ভিস) দেন; তাহলে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই টিআইএন নিতে হবে। কোন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেয়ার ক্ষেত্রেও টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়া কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিতে গেলে টিআইএন নম্বর লাগবে। এ ছাড়া আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলা যাবে না টিআইএন ছাড়া। এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলে টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। আমদানি-রফতানির বিল অব এন্ট্রির ক্ষেত্রেও এটি লাগবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ভেতরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে না টিআইএন নম্বর ছাড়া। ১২ অঙ্কের টিআইএন নম্বর ছাড়া কোন দরপত্রে কেউ অংশ নিতে পারবে না। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্য হতে গেলেও টিআইএন লাগবে। সাধারণ বীমার জরিপ কর্তারও টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর পৌরসভায় জমি-বিল্ডিং বিক্রি, পাওয়ার অব এ্যাটর্নি, হস্তান্তর, দলিলসহ এক লাখ টাকার বেশি মূল্যের কোন চুক্তিনামা করতে গেলেই টিআইএন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। বাস, প্রাইম মোভার, লরির মালিকানা পরিবর্তন কিংবা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিআইএন লাগবে। এছাড়া চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট, আর্কিটেকচার, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হতে গেলেও টিআইএন লাগবে। কোন কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর পরিচালক, মুসলিম বিবাহ ও ডিভোর্স আইনে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও যে কোন ট্রেড বডির সদস্য হতেও টিআইএন লাগবে। অর্থ আইন ২০১৭-এ বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এলাকার মধ্যে কোন ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে অনুমোদন নিতে হলে ১২ অঙ্কের টিআইএন নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, গ্যাসের বাণিজ্যিক সংযোগ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সংযোগ নেয়া, মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিআইএন নম্বর অবশ্যই থাকতে হবে। লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো কোস্টারসহ বিভিন্ন জলযানের জরিপ সনদ নেয়া, ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন ও নবায়ন, জেলা পরিবেশ কার্যালয় থেকে ইটভাটার অনুমোদন নেয়ার সময়ও অবশ্যই থাকতে হবে টিআইএন নম্বর। এছাড়া উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক। সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর ও পৌরসভায় কোন শিক্ষার্থীকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা বিদেশী কারিকুলামে ভর্তি করতে হলেও টিআইএন থাকতে হবে। সরকার সব শ্রেণীর মানুষকে টেক্সনেটের আওতায় আনতে চায়। তাই টিআইএন-কে অনলাইন ও সহজ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বাজেটে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অনলাইনে ই-টিআইএন নিতে হলে ইচ্ছুকদের িি.িরহপড়সবঃধী.মড়া.নফ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী ই-টিআইএনের ফরম পূরণ করতে হবে। সর্বশেষ অনলাইনে আবেদনপত্রটি জমা দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ই-টিআইএন সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কিনে ভেসে উঠবে। পরে তা প্রিন্ট নিতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে মাত্র কয়েক মিনিটেই স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ঘরে বসেই ই-টিআইএন পাওয়া যাবে।
যেভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন-
শুরুতেই আপনাকে আয়করের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এবার রেজিস্ট্রার অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার ইউজার আইডি (কমপক্ষে ৮ অক্ষরে) এবং পাসওয়ার্ড (কমপক্ষে ৮ অক্ষরের) চাইবে। এরপর আবার পাসওয়ার্ড লিখতে হবে। এবার অনেকগুলো নিরাপত্তা প্রশ্ন আছে। যেখান থেকে আপনার পছন্দের একটি প্রশ্ন বেছে নিয়ে উত্তর টাইপ করুন। আপনার দেশ, মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল এবং ভেরিফিকেশন লেটার টাইপ করুন। এরপর নিচের রেজিস্টারে ক্লিক করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার মুঠোফোনে একটা একটিভিশন কোড চলে আসবে। অনলাইনে সেটা লিখে দিন। এবার লগ-ইন করে টিআইএন রেজিস্ট্রেশনের ফরম পূরণ করতে শুরু করুন। যাঁদের ১০ ডিজিটের পুরনো নম্বর রয়েছে তারা পুনরায় রেজিস্ট্রারে ক্লিক করে নতুন ১২ ডিজিটের নম্বর নিতে পারবেন। এখানে একে একে করদাতার ধরন, রেজিস্ট্রেশনের ধরন, আয়ের প্রধান উৎস, লোকেশন, বেসিক ইনফরমেশন (এখানে করদাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুকরনে সব তথ্য দিতে হবে। কারণ, এটা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে)। এরপর তার ঠিকানা দিতে হবে।
নিচে আরেকবার তথ্যগুলো চেক করে নেয়ার সুযোগ পাবেন। এখানে কিছু ভুল হলে পুনরায় ঠিক করে নিয়ে সাবমিট করতে হবে। এবার করদাতার টিআইএন নম্বর এবং টিআইএন সনদ তৈরি হয়ে আসবে। এই সনদ আপনি চাইলে সরাসরি প্রিন্ট, ই-মেইল বা সেভ করে নিতে পারবেন। ফরম পূরণে যে কোন স্থানে আটকে গেলে ইউজার গাইড অপশন ক্লিক করে সমাধান পাবেন।সূত্র-জনকন্ঠ
Leave a Reply