ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের আঁধারে বুলডোজার দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুণ আল রশিদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও বাড়ির ভেতরের স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। করাত দিয়ে বাড়িরের ভেতরের বড়গাছও কেটে ফেলা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কয়েক ঘন্টা ধরে এই তান্ডব চালানো হয় শহরের প্রানকেন্দ্রের ওই বাড়িটিতে। সেখানে বর্তমানে মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামালও লুট করে নেয়া হয়। এদিকে সকালে এখবর ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র নেতারা। ভীড় জমান সাধারন মানুষও। এনিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সর্বস্থরের মানুষের মধ্যে।
হারুন আল রশিদ সদর আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি সরকারের ত্রান ও পূনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ছিলেন। তিনি বর্তমানে কানাডা প্রবাসে রয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- রাত দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে প্রায় শতাধিক লোক বুলডোজার নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের এক্স-রে টেকনিশিয়ান শফিক মিয়া জানান- তাদের বাঁধা দিতে গেলে পৌরসভা থেকে এসেছেন বলে জানান। ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক জানান, ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও একটি এসি ট্রাকে করে নিয়ে গেছে তারা। এছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও পাঁচটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে।
জানা গেছে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাকারিয়া ও ডা. মনির হোসেন, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম,ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক এবং জেলা আওয়ামীলীগের এক নেতাসহ বেশ কয়েকজন মিলে হারুন আল রশিদের বাড়ি লাগোয়া পশ্চিম দিকে নতুন আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জায়গা কিনেছেন। সেখানে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। মূলত ওই হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা বের করতে বাড়িটিতে এমন তান্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এরআগে গত ৩ জুলাই মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জাকারিয়া পৌরসভা মেয়রের কাছে এক আবেদনে জায়গাটি দখলমুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। রাতে এই তান্ডবের সময় প্রস্তাবিত ওই হাসপাতাল মালিকদের অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছেননা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে সকাল সোয়া ১১টার পর ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এই ঘটনার সংবাদ কেউ আমাদের দেয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর জানান-পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মামলা দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরআগে সকাল ১০টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এ বি এমন মমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সূত্র-মানব জমিন