আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের জন্য বাংলাদেশের কাছে ভারতের জায়গা চাওয়া নিয়ে সরকার লুকোচুরি করছে । বাংলাদেশের মন্ত্রীরা জমি চাওয়ার খবর নাকচ করলেও ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (এএআই) পরিচালক বিপিন কান্ত শেঠের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের কাছে ৫২ একর জমি চাওয়ার বিষয়টি ত্রিপুরা সরকারকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলতে অনুরোধ করা হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নিশ্চিত করেছেন, রাজ্য সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিষয়টি তুলেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, আগরতলার বিমানবন্দরটি শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জনগণই ব্যবহার করে না, বাংলাদেশিরাও করে। ওই বিমানবন্দর থেকে এয়ারবাস ও অন্যান্য বড় এয়ারক্রাফট পরিচালনা করতে পারলে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে। বাংলাদেশ ত্রিপুরাকে জমি দিলে ত্রিপুরার বিমানবন্দরের জন্য এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ কোটি রুপি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে এ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাবের কথা তাঁর জানা নেই।

এরপর গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বরাত দিয়ে ডয়চে ভেলে জানায়, আগরতলা বিমানবন্দরে নিরাপদে ফ্লাইট অবতরণে ‘ক্যাট আই লাইট’ স্থাপনের জন্য জমি চেয়ে ভারত বাংলাদেশকে যে অনুরোধপত্র দিয়েছে তা পর্যালোচনায় সরকার এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।

ডয়চে ভেলেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের কাছ থেকে অফিশিয়াল (আনুষ্ঠানিক) প্রস্তাব পাওয়ার পর সিভিল এভিয়েশনকে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। তারা কাজও শুরু করেছে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এরপর গত শনিবার বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের কাছে জমি চেয়েছে এমন তথ্য জোর গলায় অস্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বিভিন্ন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে নানা ধরনের পরস্পরবিরোধী খবরের প্রেক্ষাপটে বিবিসি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চায়, ভারত কি আসলেই বাংলাদেশকে এ রকম কোনো প্রস্তাব দিয়েছে? জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভারত আমাদের কাছে কোনো জমি চায়নি। যে খবরটি আপনারা জেনেছেন সেটা সম্পূর্ণ অসত্য।’ তিনি বলেন, ‘ভারত মূলত যেটা চেয়েছে, সেটা হচ্ছে ত্রিপুরা বিমানবন্দরের রানওয়েতে লাইটের কমপ্লিট ফেজ পূরণ করতে বাংলাদেশের অংশে কিছু লাইট বসাতে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাট আই লাইটের কমপ্লিট প্যানেলের যে দৈর্ঘ্য সেটা বসানোর মতো জায়গা ভারতের অংশে না থাকায় তারা বাকি কিছু লাইট বাংলাদেশের অংশে বসানোর অনুরোধ করে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত লাইট বসানোর বাইরে রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য জমি বা কোনো অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কিছু চায়নি। এসব লাইটের বেশির ভাগ ভারতের অংশেই বসবে। এর মধ্যে কিছু লাইট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বাংলাদেশের অংশে বসানো হতে পারে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ভারত থেকে কোনো প্রস্তাব এলেই এটি নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করা হয়। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। একটি চক্র সব সময় এতে তাদের সস্তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার করে। তিনি বলেন, সরকারের নীতি হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা। সরকারের এই নীতির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যাতায়াত অনেক দূর এগিয়েছে। সুনির্দিষ্ট কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে এগুলো করা হয়েছে। লাইট বসানোর বিষয়টিও সেভাবেই করা হবে।সূত্র-বিবিসি,কালেরকন্ঠ