ব্রিটেনে বসবাসকারীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন পেয়ে থাকেন বাংলাদেশি কর্মজীবীরা। তাদের পরেই রয়েছেন পাকিস্তানিরা। আর সবচেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন যথাক্রমে চীনা ও ভারতীয়রা। স¤প্রতি এক সরকারি জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

খবরে বলা হয়, ব্রিটেনে জাতিগত বেতন বৈষম্য নিয়ে এই প্রথম কোনো সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর্মঘণ্টা হিসেব করে এই আয়ের তালিকা তৈরি করেছে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘এথনিসিটি পে গ্যাপস ইন গ্রেট ব্রিটেন : ২০১৮’ শীর্ষক ওই পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুসারে, ঘণ্টাপ্রতি বেতনের হিসাবে বাংলাদেশিরা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের চেয়ে ২০.১ শতাংশ কম বেতন পেয়ে থাকেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা ও পেশা বিবেচনায় আনার পরও ব্রিটেনে তীব্র জাতিগত বেতন বৈষম্য দেখা যায়। বিশেষ করে যারা ব্রিটেনের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য প্রকট। পরিসংখ্যান অনুসারে, শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবীদের চেয়ে সংখ্যালঘুরা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কম বেতন পান। লন্ডনে এই বৈষম্যের হার ২১.৭ শতাংশ। আর এদিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা। গত বছর শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ কর্মজীবীদের ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় ছিল ১২ পাউন্ড। আর বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় ও চীনাদের গড় আয় ছিল যথাক্রমে ৯.৬০ পাউন্ড, ১০ পাউন্ড, ১৩.৪৭ পাউন্ড ও ১৫.৭৫ পাউন্ড।
কেবল পারিশ্রমিক নয়, বেকারত্বের দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের বেকারত্বের হার হচ্ছে যথাক্রমে ৫৮.২ শতাংশ ও ৫৪.৯ শতাংশ।

বৈষম্যের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা যুক্তরাজ্যে জন্ম নিয়েছে এবং যাদের জন্ম অন্য কোথাও তাদের আয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। পড়াশোনা এবং ইংরেজি বলার দক্ষতা এক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখে।
প্রতিবেদনে নারী-পুরুষ ভিত্তিতেও বৈষম্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, পাকিস্তানি বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা কর্মক্ষেত্রে কম যোগ দিয়ে থাকেন। সম্ভবত সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। কেননা, বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৩৮.১ শতাংশ নারী ও পাকিস্তানিদের মধ্যে ৩২.১ শতাংশ নারী কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করেন না। তবে গড় তুলনায় বাংলাদেশি পুরুষদের চেয়ে নারীরা ১০.৫ শতাংশ বেশি আয় করে।

যুক্তরাজ্যের বেতন বৈষম্য বিষয়ক এই পরিসংখ্যান নিয়ে সমতা বিষয়ক থিংকট্যাংক রানিমেডে ট্রাস্টের উপ-পরিচালক জুবাইদা হক বলেন, এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হচ্ছে যে, বর্তমানেও আপনার বংশই ঠিক করে দেয় আপনি এদেশে কেমন উপার্জন করতে পারবেন। এটা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সমতার সুযোগ বিরোধী। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের পরিসংখ্যান প্রকাশের পাশাপাশি, এই বৈষম্য কাটিয়ে তোলার একটি পরিকল্পনাও প্রকাশ করতে বলা উচিৎ। অন্যথায়, কোনো লাভ নেই।

ব্রিটেনের কর্মসংস্থান মন্ত্রী অলক শর্মা প্রতিবেদনটি নিয়ে বলেন, ৩০ বছরের কম বয়সীদের পরিসংখ্যান বিবেচনায় দেখা যায় যে, প্রজন্মের ব্যবধানে বৈষম্যের হারও কমে এসেছে। তবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে আমাদের আরো উদ্যোগ নিতে হবে।