আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এই নিত্যপণ্যটির। গত দুই দিনে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম গড়ে ১৫ টাকা বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যথার্থ কারণ না থাকলেও খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ তোলার সময় বৃষ্টি ছিল। এতে নষ্ট হওয়ার ভয়ে দেশি পেঁয়াজ আগাম বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে আড়তগুলোতে এখন দেশি পেঁয়াজ কম সরবরাহ হচ্ছে। তাছাড়া সামনে কোরবানির ঈদ এবং ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছেন তারা।

গতকাল সোমবার ঢাকার বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল। এতে কেজিতে গড়ে ১৫ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এ ছাড়া রসুন ও আদাও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পণ্য দুটির দাম। গতকাল প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি আদার কেজি ২০০ টাকায় পৌঁছেছে। চীনা আদা ১৫০ টাকা ও থাইল্যান্ডের আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, পেঁয়াজের কেজি ৩৬ থেকে ৫০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৬ থেকে ৪৭ শতাংশ। আদার কেজি মানভেদে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা হয়েছে। দেশি রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানি রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। দেশি রসুনের দাম ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়েছে।

শুধু খুচরা বাজার নয়, পাইকারি আড়ত ও আমদানি পর্যায়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গতকাল হিলি স্থলবন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। রাজধানীর কৃষি পণ্যের পাইকারি বড় আড়ত শ্যামবাজারে এই পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজারে এসে তা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। পাইকারি এই বাজারগুলোতে গতকাল সোমবার দেশি পেঁয়াজ ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়। আগের দিন রোববার ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল।

পেঁয়াজের চাহিদা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এ হিসাবে দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার টন পেঁয়াজ ব্যবহার হয়। খুচরা বাজারের বাড়তি দর প্রতিটন পেঁয়াজে ১৫ হাজার টাকা হলে দিনে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে ক্রেতাদের। এ হিসাবে দুই দিনে পেঁয়াজ কিনতে ২০ থেকে ২৪ কোটি টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে।

পাবনার মোকাম থেকে পেঁয়াজ কিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল খালেক। তিনি সমকালকে বলেন, পেঁয়াজের বাজার নির্ভর করে আমদানি পেঁয়াজের দামের ওপর। আমদানি পেঁয়াজের দর বেড়ে যাওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, সীমান্ত বন্ধ হতে পারে। এ কারণে হঠাৎ দাম বেড়ে যায়। এই দর স্থায়ী হবে না বলে মনে করেন তিনি।

পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানিকারক এবং শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মাজেদ সমকালকে বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে দর বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে দাম আর তেমন বাড়বে না।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানি কারক সাইফুল ইসলাম জানান, ভারত সরকারের প্রণোদনা প্রত্যাহার ও সে দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া খারাপ থাকায় পেঁয়াজ তেমন উৎপাদন হয়নি। সে কারণে ভারত থেকে আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সে জন্য আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের আবওহায়া যদি এ রকম থাকে তাহলে ঈদের আগে দেশের বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই।
হিলিতে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার জানান, আমি বন্দরে প্রতিনিয়ত পেঁয়াজ কিনতে আসি। আজ বন্দরে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ কিনতে অনেকটাই সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ আমাদের মোকামে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি আগের দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের ৩ কর্ম দিবসে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১০২ ট্রাকে ২ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

ভারতের নাসিকে পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়। সেখান থেকে এ দেশে বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও কমডিটি অনলাইনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসের মাঝামাঝি ভারতের নাসিকে পেঁয়াজের গড় দর ১৩ রুপি থেকে কমে প্রতি কেজি ১২ রুপিতে বিক্রি হয়। এর পর থেকে এই দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল ভারতের বাজারে গড় দাম ১৩ রুপি ছিল। দেশটির বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন সাড়ে ৬ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ১৭ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।