নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরে ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রীকে ধর্ষণের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের টার্গেট করে ওই শিক্ষক প্রথমে দু-একটি ঘটনা ঘটান। কিন্তু কেউ মুখ না খোলায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ছাত্রীদের একের পর এক টার্গেট করেন এই শিক্ষক। এমনকি ব্ল্যাকমেইল করে এক ছাত্রীর মাকে ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

কাউকে প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়ার কথা বলে, কোনো ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়ে, আবার কোনো ফেল করা ছাত্রীকে ডেকে ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে চেয়ে ফাঁদে ফেলতেন শিক্ষক আরিফ। অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক হওয়ায় তিনি এসব সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। তিনি জানান, শিক্ষক আরিফুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন ৭-৮ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের ডিভাইস চেক করে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির প্রমাণ মিলেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘শিক্ষক আরিফুলের ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন শিক্ষার্থী। এমনকি এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর তার ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তার মাকেও ওই শিক্ষক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।’ এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘সিরিয়াল রেপিস্ট শিক্ষক আরিফুল ইসলাম র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। স্কুল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুধু ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। ২০১৪ থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন এবং স্কুলের বাইরের কয়েকজন ছাত্রীকেও বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। একজনকে ফেল করিয়ে দিয়ে এবং আরেকজনকে বাসায় ডেকে অন্যের খাতা দেখে লেখার সুযোগ দিয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন আরিফ। এ ছাড়া ২০১৫ সালে এক ছাত্রীকে টার্গেট করে ২০১৬ সালে তাকে ধর্ষণ করেছেন তিনি।’ তিনি বলেন, ‘ভয়ে অভিভাবকদের কাছে শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের কথা বলেনি শিক্ষার্থীরা।’
এদিকে ভয়ঙ্কর ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্লোগানে এক ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মুখরিত ছিল। শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের শেল্টারদাতা প্রধান শিক্ষকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ডের উভয় পাশে পৌনে এক কিলোমিটার এলাকায় গ্রেফতার শিক্ষক আশরাফুল আরিফ ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারের ফাঁসির দাবিতে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে স্থানীয় ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসী অংশ নেন।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন পালন করেন তারা। এ ছাড়া মানববন্ধনে অক্সফোর্ড হাইস্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, নাসিক ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, আবদুর রহিম মেম্বার, আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজু, শিক্ষক নুরুল আলম, সুমন কাজী, মাজেদুল হক মনির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড হাইস্কুলের শিক্ষক কর্তৃক আপত্তিকর ছবি তুলে ২০ জনের বেশি ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে পালাক্রমে ধর্ষণ করার অভিযোগে ২৭ জুন পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আরিফ ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় শিক্ষক আশরাফুল আরিফের তিন দিন করে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এ ছাড়া আদালত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।