ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৯৬ রানে হারিয়ে টাইগারদের সামনে আসা ক্যারিবীয়রা ব্যাটে-বলে পাত্তাই পায়নি মাশরাফীদের কাছে।
আগে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বড় স্কোর পেতেই পারত। যেভাবে এগোচ্ছিল তাতে রানের পাহাড় না হলেও বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য দেওয়া কঠিন কিছু ছিল না তাদের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। হতে দেননি আসলে মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৪১ ও ৪৩—এই দুই ওভারের ৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা আটকে দিয়েছেন ভালোভাবেই। এ ধাক্কায় স্লগ ওভারটা আর ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫০ ওভারে ক্যারিবীয়দের স্কোর ৯ উইকেটে ২৬১ রানের বেশি হয়নি, যেটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টপকেছেন অনায়াসে।

অধিনায়ক মাশরাফী নিজে প্রথমে বল হাতে ঘুরে দাঁড়ানোয় নেতৃত্ব দিয়েছেন। যোগ্য সঙ্গী পেয়েছেন সাকিব-মিরাজ-সাইফউদ্দদিনকে। পরে ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্যর ১৪৪ রানের জুটিতে লাল-সবুজরা লক্ষ্যে নোঙর ফেলেছে বুক চিতিয়েই। সৌম্য, তামিম, সাকিবের ব্যাটে এসেছে ফিফটি।

ডাবলিনের ক্লনটর্ফ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৬১ রান তোলে উইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ৩০ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

উইন্ডিজের দেয়া লক্ষ্যটা খুব বড় নয়। মাথা খাটিয়ে এগোলে বিপদ এড়ানো সম্ভব। গন্তব্যে হাঁটার শুরুটা তাই যেন দুই টাইগার ওপেনার করলেন ধীরেসুস্থেই। বিগ শটে মন না দিয়েও দুজনে সচল রেখেছেন রানের চাকা। পরে ১২ ওভারে ৫৫ রান তুলে একটু খোলস ছাড়ার চেষ্টা।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ভরপুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে আয়ারল্যান্ডে যাওয়া সৌম্য এরমাঝেই কিছুটা আগ্রাসী হতে চেয়েছেন। তবে তামিম খেলছেন একদম ঠাণ্ডা মাথায়।

ওপেনিং জুটিতে উইন্ডিজ তুলেছিল ৮৯ রান। জবাব দিতে নেমে সেটি ছাড়িয়ে অনেকদূর যায় বাংলাদেশ। জুটিতে একশ ছুঁয়ে আরও দূর, ১৪৪ রানের সময় বাউন্ডারির কাছে অসাধারণ এক ক্যাচে সৌম্য ফিরলে তামিম একা হন। ততক্ষণে ২৬ ওভার হয়ে গেছে খেলা। শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে দল পেতে শুরু করেছে জয়ের সুবাস।

সুবাস ছড়ানোর পথে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলেছেন সৌম্য। সোজা ব্যাটে ছক্কা মেরে দলীয় ফিফটি পূর্ণ করা এ বাঁহাতি মন্থর উইকেটেও ছিলেন সাবলীল। তুলে নেন ফিফটি। ফেরার সময় নামের পাশে ঝলমলে ৭৩, ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬৮ বলে সাজানো।

সৌম্য আউট হয়েছেন বিগশট খেলতে যেয়েই। চেজের বলে তুলে মেরেছিলেন। একেবারে বাউন্ডারি ঘেঁষে সেটি তালুবন্দী করেন ব্রাভো। বল তালুতে জমিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলেন না। চলে যাচ্ছিলেন বাউন্ডারির বাইরে। তখন সীমানার মধ্যে বল খানিকটা উপরে ছুঁড়ে শরীরের নিয়ন্ত্রণ সামলে আবার তালুবন্দী করেন ব্রাভো। থামে সৌম্যর দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটি।

তামিম পরে অনেকক্ষণ থাকলেন। সৌম্য হাতছাড়া করলেও মনে হচ্ছিল তিনি সেঞ্চুরি তুলেই থামবেন! কিন্তু এ বাঁহাতিও পারেননি। ৭ চারে ১১৬ বলে ৮০ রানে হোল্ডারের দারুণ ক্যাচে ফিরেছেন। তার আগে সাকিবের সাথে ৫২ রানের আরেকটি জুটিতে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এনেছেন দলকে।

সেই সাকিব শেষ পর্যন্ত থাকলেন। মুশফিককে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৬৮ রানের জুটি গড়ে জয় ছুঁয়েই মাঠ ছেড়েছেন। তার আগে তুলেছেন ফিফটি। ৩চার ও ২ ছক্কায় ৬১ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস সাকিবের। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আড়াইশ পেরোনো সংগ্রহ গড়ে উইন্ডিজ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে ১৭০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা শাই হোপ এদিন ১০৯ রান করে ফেরেন। স্লগ ওভারে মাশরাফী দ্রুত তিন উইকেট তুলে নিলে নাগালেই থাকে লক্ষ্য। সেটির জবাব দাপটেই দিলেন ব্যাটসম্যানরা