দেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরসভার একটি ময়মনসিং পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শীতল সরকার। এলাকার একটি সুপরিচিত নাম। একটি সাফল্যের জন্য দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে সংগ্রাম করে অবশেষে গতকাল ৫ি মে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী শীতল সরকার।
ময়মনসিং পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কমিশনার প্রার্থী হিসেবে শীতল সরকার প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮১ সালে। প্রথম নির্বাচনে পাস করতে না পারলেও ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পান তিনি। সেই সাহস নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। কিন্তু অল্পের জন্য জয়ের দেখা পাননি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৮ সালে সরিষাবাড়ীর লক্ষী সরকাররের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শীতল সরকার। এর বছর খানেক পরই নির্বাচন হয় ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে। তখন লক্ষী সরকার অন্তঃসত্ত্বা। ওই নির্বাচনেও হেরে যান শীতল সরকার। সেই সাথে একের পর এক নির্বাচনে অংশ নিয়ে খোয়ান টাকা-পয়সাও। সব মিলিয়ে স্ত্রী গর্ভের সন্তানকে নিয়ে চলে যান নিজ বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়িতে।
১৯৮১ সালে প্রথমবার কমিশনার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন । প্রথম নির্বাচনে পাস করতে না পারলেও ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পান তিনি। সেই সাহস নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। কিন্তু অল্পের জন্য জয়ের দেখা পাননি।

এভাবে চলে তার প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ। কোনো সময় এলাকাবাসী তার পাশে দাঁড়িয়েছে, কোনো সময় দাঁড়াইনি। তবু থেমে থাকেনি শীতল সরকার। নির্বাচনে পরাজয়ের পরদিনই মান-অভিমান ভুলে আবারও ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিষয়টি হয়তো কেউ ভালো চোখে দেখেছে কেউ দেখেনি। এভাবে চলে তার একে একে ছয় বার কমিশনার ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেয়া। সর্বশেষ ২০১১ সালে ময়মনসিংহ পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। শীতল সরকারের অভিযোগ- ২০১১ সালের নির্বাচনে পাস করলেও তাকে অন্যায়ভাবে হারানো হয়েছিল।

২০১১ থেকে ২০১৯ দীর্ঘ আট বছর। এর মাঝে ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। হয়েছে নতুন বিভাগ। ২০১৮ সালে প্রাচীনতম এই পৌরসভাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে গঠন করা হয় দেশের ১২তম সিটি কর্পোরেশন। ২০১১ সালে পরাজয়ের পর থেকে নতুন করে পথ চলা শুরু করে শীতল সরকারও। প্রস্তুতি নবগঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৮ম বারের মতো অংশ নেয়া। কিন্তু পথে অনেক বাঁধা। এই ওয়ার্ড থেকে যে সকল প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে সবাই অনেক টাকার মালিক। আর শীতল সরকারের একমাত্র পুঁজি তার শীতল কথা। অবশেষে তফসিল, মনোনয়ন জমা, প্রতীক বরাদ্দ। প্রতীক বরাদ্দের দিন মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে ওয়ার্ডবাসীর কাছে হাজির শীতল বাবু। ৫ মের নির্বাচনে শীতল সরকার ২২৬১ ভোটে মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আল-মাসুদ পান ১৬৫৯ ভোট।
এলাকার মানুষ দায়বদ্ধ হয়ে শীতল সরকারকে ভোট দিয়েছে। ওয়ার্ডের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ চাঁদা দিয়ে শ্রম দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে।
স্থানীয়রা জানান, তার অর্থ সম্পদ বলতে কিছুই নেই। নির্বাচন করে ঘরের খাট, আলমারি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। এলাকার যুব সমাজ চাঁদা তুলে সেই অর্থ দিয়ে পোস্টার লিফলেট ছাপিয়েছে। সর্বপরি আমারা একজন সৎ, নির্লোভ ও ভালো মানুষকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে পেরেছি এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
নির্বাচলে জয়ের পর মুঠোফোনে শীতল সরকারকে স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর মেলে- ‘অহন সব ঠিক হইয়া যাইবো। বউ আইবো, সন্তানও আইবো। বউ তো যাওয়ার সময় কইয়া গেছিল আমি নির্বাচনে জিতলে আইবো।