অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 682 বার
সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মুকিত। ১৯৮৩ সালে ডিসি অফিসে ‘জারিকারক’ হিসেবে যোগদানের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
নিজের ও স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। গত ৮ নভেম্বর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে কমিশনে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিলেও তিনি সেভাবে গা-করছেন না।
দুদকের অনুসন্ধানে তার সম্পতির যে বিবরণ পাওয়া গেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। সরকারি চাকরি করেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে পাসপোর্ট করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের মৃত গোলাপ রহমানের ছেলে আবদুল মুকিত ১৯৮৩ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জারিকারক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারী হন।
জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) অফিসে দীর্ঘ ৪ বছর কর্মরত থাকার সময়ই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা নদীর উত্তরে জেগে ওঠা নলের চর, নাঙ্গলিয়ার চর, কেয়ারিং চর, ভূমিহীন বাজার এলাকা, বয়ারচর, সোনাদিয়া, তমরদ্দি, জাহাজমারা, নিঝুম দ্বীপ, চর ঈশ্বর, চর কিং ও বুড়ির চর ইউনিয়নে হাজার হাজার একর খাস জমি রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নামমাত্র রাজস্ব নিয়ে এসব জমি ভূমিদস্যুদের মাঝে চিংড়ি প্রজেক্টের নামে ইজারা দেয়ার বিনিময়ে অবৈধভাবে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর সঙ্গে একটি চক্র জড়িত। এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছেন আবদুল মুকিত। ভূমি অফিসে নামা জারির নামেও বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে তার ও তার স্ত্রীর নামে যেসব সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায় তার মধ্যে-২০১৫ সালে মাইজদী হাউজিং স্টেটে তার ৪ কাঠার দুটি প্লট, যার বাজারমূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা, সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নে সুজাপুর মৌজায় ৮৭ শতাংশ জমি যার বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকা, মাইজদীর ১০৯নং গুপ্তাঙ্গ মৌজায় ৫ শতাংশের প্লট, যার বাজারমূল্য ৬০ লাখ টাকা, বিনোদপুর ইউনিয়নে বিনোদপুর মৌজায় ২৪ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকা, সফিপুর মৌজায় এক একর ৩ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা, ধর্মপুর ইউনিয়নে ভাটিরটেক মৌজার ৪ একর জমি, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকা, শুল্লুকিয়া মৌজার ২ একর ৪৮ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা, ধর্মপুর ইউনিয়নের ভাটিরটেক মৌজার ৫ একর জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর বাইরে মাইজদী হাউজিং স্টেটের পূর্ব পাশে ৭ তলার বিলাসবহুল ভবনে ২টি অ্যাপার্টমেন্ট, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়া আরও বেশ কিছু সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
ডিসি অফিসের এক কর্মচারী যুগান্তরকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাসপোর্ট করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার বিধান রয়েছে। আবদুল মুকিত অনুমোদন না নিয়েই পাসপোর্ট করে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি একাধিকবার সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গেছেন।
জানতে চাইলে আবদুল মুকিত বিদেশ সফরের কথা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হাতিয়া উপজেলায় সহকারী কমিশনার অফিসে থাকার সময় তিনি বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। শুল্লুকিয়া মৌজার ৩১২৯নং খতিয়ানের ২ একর ৪৮ শতাংশ জমি আমার বাবা ক্রয় করে আমাকে দান করেছেন। হাউজিং এলাকায় ৭ তলা ভবনের ২টি অ্যাপার্টমেন্ট থাকার কথা স্বীকার করলেও তিনি বলেন, সেটা তার স্ত্রীর নামে। একই এলাকায় ৫ কাঠা জমি আমি নিজে ক্রয় করেছি।
জেলা দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম যুগান্তরকে বলেছেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ইউএনও’র অফিস সহকারী মুকিতের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও বিধিবহির্ভূতভাবে সপরিবারে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন।সূত্র-যুগান্তর
Leave a Reply