একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনারদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোট কক্ষের ভেতর থেকে কোনভাবে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। টেলিভিশন, অনলাইন, মোবাইল বা ক্যামেরায় হোক- সরাসরি সম্প্রচার যেন না করে সে বিষয়ে অনুরোধ করছি।’ উল্লেখ্য, ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে সম্প্রচারে আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। নূরুল হুদা বলেন, ‘ভোট কক্ষের মধ্যে ছবি বা ভিডিও করতে কোন বাধা নেই। শুধু সরাসরি সম্প্রচার না করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’ সিইসি বলেন, অন্য নির্বাচনের মতো একাদশ সংসদ নির্বাচনেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৫ হাজারেরও বেশি ভোট কক্ষ থাকবে। এসব ভোটকেন্দ্রে দেশের ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি ভোটার ভোট প্রদান করবে। সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে নূরুল হুদা বলেন, ভোট কক্ষের ভেতরের দৃশ্যধারণ করে ও ছবি তুলে ভোট কক্ষের বাইরে বারান্দা বা মাঠের যে যে কোন স্থানে সরাসরি সম্প্রচারে কোন বাধা নেই।

“ভোটকক্ষের ভেতরে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্টরা থাকেন, সেই সঙ্গে একদল সাংবাদিক সরাসরি সম্প্রচারে গেলে ভোট দেওয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। সব বিবেচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কে এম নুরুল হুদা আরও বলেন, দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য আলাদা নীতিমালা আছে। নীতিমালা অনুযায়ী তাঁরা বেশিক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন না। কক্ষের ভেতরে ছবি তুলে সরাসরি সম্প্রচারও করতে পারবেন না তাঁরা। অবশ্য প্রয়োজনে কেন্দ্রের বাইরে ছবি তুলতে পারবেন। কেন্দ্রের ভেতরে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে সাংবাদিকেরা মোবাইলে ছবি তুলে পারবেন। একই সঙ্গে শৃঙ্খলার স্বার্থে সংবাদকর্মী ও পর্যবেক্ষকেরা যেন বড় বড় দলে ভোটকক্ষে প্রবেশ না করেন এবং বেশি সময় অবস্থান না করেন, সেই বিষয়ে আহ্বান জানান সিইসি।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তিনি মনে করেন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। সব প্রার্থী প্রচার চালাতে পারছেন, প্রচারে বাধা নেই। ড. কামালের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ ঘটনাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি তদন্ত করতে নির্বাচনী তদন্ত কমিটিতে পাঠানো হবে। বিনা ওয়ারেন্টে বা ফৌজদারি মামলা ছাড়া কাউকে যেন অহেতুক গ্রেপ্তার করা না হয়, সেই ব্যাপারে দু-এক দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদা।

সারা দেশে হামলার খবরের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ করা এবং ইন্টারনেটের গতি কমানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন সিইসি।

মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে সিইসি বলেন, সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও মোবাইলের মাধ্যমে ছবি তুলতে বাধা নেই। তবে ভোটকক্ষের ভেতরে কথা বলা যাবে না। ছবি তোলা শেষ করে বাইরে এসে কথা বলতে হবে। ইসির মিডিয়া সেন্টারে এ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।