বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মাদকের আসর থেকে ইয়াবা সুন্দরী নীলাকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুল জীবনে বখে যাওয়া বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে বখাটে হয়ে যায় নীলা (৩২)। নীলার বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার হরিণাহাটি গ্রামে। নীলা ওই গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ শিকদারে মেয়ে। আব্দুল আজিজ সিকদার বাংলাদেশ বেতারে চাকুরি করতেন। বাবার চাকুরির সুবাদে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা অবস্থায় নেশায় আসক্ত হয়ে পরে নীলা। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নীলা মেঝ। নেশার জগতে পা দেওয়ার কারণে লেখা পড়া বেশি দূর না আগানোয় বিয়ে দেওয়া হয় নীলাকে। কিন্তু বেশি দিন টেকেনি সেই বিয়ে। এভাবে একাধিক বিয়ের পর নীলা নিজের পছন্দে ঢাকার মিরপুরে ওসমানি গনি সাফিন নামে গ্রামীণ শক্তির এক ব্যাটারি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে নীলা। স্বামীর পূর্বের সংসার থাকায় স্বামীর বাড়িতে উঠতে পারেনি সে। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। তবে মাঝে মধ্যে নীলার কাছে আসত তার স্বামী ওসমান গনি। পূর্বের দাম্পত্য জীবনে নীলা একটি কন্যা সন্তানের মা হলেও ওই মেয়েটি মারা যায়।

বর্তমানে নীলার তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সাময়িক সুখের খোঁজে একাকীত্ব জীবনে নীলা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এভাবেই মাদকসেবী থেকে নীলা পা বাড়ায় মাদক ব্যবসায়। অত্যন্ত সু-চতুর নীলা নিজের যৌবনের রূপ লাবণ্যকে কাজে লাগিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিদেশ ফেরত উঠতি বয়সী তরুণদের। এভাবে কৌশলী নীলা সখ্যতা গড়ে তুলতে থাকে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। ধনাঢ্য বখে যাওয়া তরুণ মাদকসেবীদের টাকায় নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের সিন্ডিকেট। নিজের ভাড়া বাসায় দিন ও রাতে চলে মাদক সেবন, ব্যবসা। সাথে চলত রাত জেগে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মধু চন্দ্রিমা। নীলার মধু চন্দ্রিমায় হাজির হতো এলাকার প্রভাবশালী নামকরা ব্যক্তিত্বদের ছেলেরা।

স্থানীয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রভাবশালী লোকজনের ছেলেরা নিত্য সঙ্গী হয়ে পরে নীলার মধু চন্দ্রিমায়। প্রভাবশালীদের নেশাখোর ছেলেদের সাথে সখ্যতার কারণে আশপাশের কেউই নীলার বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস পেত না। মাঝে মধ্যে নীলা ওই সকল বন্ধুদের সাথে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বেড়াতে যেত। তার পরেও গৌরনদী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা অবস্থায় নীলার এহেন কাজের জন্য সেখানকার স্থানীয়রা নীলাকে ওই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করায়। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে নীলা আগৈলঝাড়া উপজেলা বাগধা ইউনিয়নের সদস্য মিথুন মেম্বরের ফুল্লশ্রী গ্রামের পাকা বাড়ি ভাড়া নেয়। মাদক আার টাকার পাহাড় গড়ে তোলার নেশায় এক পর্যায়ে সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠে নীলা। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ছিচকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে তাদের ওই বাড়িতে নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের আসনরের মধু চন্দ্রিমা। সেখানে অবস্থান করা নীলার অতিথিরা ঘর থেকেও বের হত না। নীলার আশ্রয়ে ৪/৫দিন থাকলেও ওই অতিথিদের খাবার সংগ্রহ করা হতো বাইরে থেকে। তবে নীলার মধু চন্দ্রিমায় বিপত্তি ঘটায় পুলিশ।

সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর রাতে ইয়াবাসহ নীলা ও তার অপর সঙ্গী ওই এলাকার কামাল পাইকের ছেলে রফিকুল ইসলাম পাইককে (১৯) গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় নীলার কাছ থেকে ১৫পিচ ও রফিকের কাছ থেকে ৫পিচ ইয়াবাসহ আসর থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। বহু নাটকীয়তা শেষে শাওন ও আলী হোসেনকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও নীলা আর রফিকের বিরুদ্ধে, মামলা নং০১। ওই মামলায় বর্তমানে নীলা ও তার মাদকের বন্ধু রফিকুল পাইক জেল হাজতে রয়েছে।

বাড়ির মালিক মিথুন মেম্বর জানান, গ্রেফতারকৃত নীলা তাদের গ্রামের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বাসা ভাড়া দেয়ার পরে সে জানতে পারে যে, নীলা খারাপ কাজের সাথে জড়িত। তাই তাকে বাসা ভাড়া অন্যত্র চলে যাবার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ১ ডিসেম্বর তার অন্য বাসায় যাবার কতা থাকলেও ৩০ তারিখ রাতে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নীলা গ্রেফতারের পর অনেকেই জানতে পেরেছেন যে তার কারণে তাদের উঠতি বয়সী ছেলেরা বিপথগামী হচ্ছিল। তাই সে জামিনে এলেও তাকে আর ওই এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া দেবেন না। নীলা গ্রেফতারে স্বস্তিতে রয়েছেন তারা। এরকম মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের আরও অভিযানের আহ্বান জানান তারা।

আগৈলঝড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন জানান, এত বড় মাদকের সিন্ডিকেটের কথা তিনিও জানতেন না। অভিযানে নীলা গ্রেফতারের পর অনেক ঘটনাই সামনে আসছে। সকল বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এভাবে আরও কয়েকটি আস্তানার কথা জানা গেছে জানিয়ে সহসাই সেখানেও অভিযান পরিচালনার কথা জানান তিনি।সূত্র-ইত্তেফাক